কবি ঋজু রেজওয়ানের দশটি কবিতা

কবি ঋজু রেজওয়ানের দশটি কবিতা


কোয়ান্টাম ম্যাটার

সত্য নৈর্ব্যক্তিক! হোক যা-ই ঘটমান,

তার পূর্ব-প্রস্তুতিতে... বিন্দুর বিস্ফার

 

অনন্য মিথস্ক্রিয়ারহেড নাকি টেল?

 

সম্ভবনা-দ্বন্দ্বে...

একাধিক অস্তিত্ব সিথা‌নে পিঠাপিঠির পে‌রেক।

 

নিঃ ঝুম বিকেল যত বিষাদ নিয়েছে

হতে পারেনৈঃশব্দ্যের অকারণ চিৎকার...।

 

সম্ভবনার সমাপতনে...!

তুমি

 

কখনও নাচের মুদ্রা, কখনও বা পার্টিকেল

একই অঙ্গের ভেদ। ঘটনা ও সম্ভবনার রঙে...

 

‘আমি’ হ‌লো সত্তা

আত্মা জে‌গে উঠল ঈশ্বর হ‌য়ে।

 

চোখ মেলি দে‌হে... জ্ব‌লে উঠে পরমাত্মা;

      আমিত্বের দি‌কে চে‌য়ে বলি, 'ঈশ্বর'!

 

তবুও ঈশ্বরএকসঙ্গে কখনই থাকেন না

                     নিরাকার শূন্যতায় সংহত মূহুর্ত।

 

ভেবলেন ইফেক্ট

ধরুণ,

তিন তিনটে চাবুক

[১] প্রতিপত্তি

[২] অর্জন

[৩] স্বীকৃতি

 

যার নেই, তার মনচাপড়াতে... চাপড়াতে...

চলে যানদৃশ্যমান ডার্ক ইতরামির ভূগোল।

 

গোলগোলGoal. কোন গোল?

গোলাকার বৃত্তে আমোট দুঃখের Hole!

জালকে কানেক্ট না করেইপোস্টবার থেকে...

 

ফিরে আসে জেনেটিক সিকুয়েন্সে।

তৃতীয় সূত্রের ধারে তার ক্রিয়া/বিক্রিয়ায় তুমি

ম্যালার ঠ্যালাই ঠেলো বেশি!

 

চাহিদা ও যোগানের বৈপরীত্যে আরও দুর্নিবার।

‘বাপ কা বেটা সিপাহী কা ঘোড়া’!

লে হালুয়ামাইক্রোফোনের জিরো বাউন্ডারি,

 

অন্যকেই দেখানোই সুখ! খারাপটা লুকানোই...

জেনিটিক্স! এবং মানুষপেইন খাওয়ানোতেই

                                      প্রকৃতই স্বভাব ইতর।

 

গপ্প, ক‌বিতা নয় কিন্তু

ধরুন,

     A, B কে গা‌লি দিচ্ছে...

 

B চুপ ক‌রে শুনছে...  চরম বিব্রত

 

C, D, E etc. etc.

তারাওবিব্রত

 

B আর কিছু না পে‌রে এক্কা‌দোক্কা

 

ক্ষোভ আর হতাশায়

বৈষ‌য়িক ছক্কা পাঞ্জা

 

সব A কে দি‌য়ে... নিভৃ‌তে থাকাও…

 

জ‌টিল সংসারভূ‌মে

ক‌ঠিন/ক‌ঠিনওতর

 

দে‌বে আপনারএকা‌কীত্ব‌কেও...

 

নিম ফু‌লের পরা‌নে

স্বার্থপ‌রের… দেমাগ

 

দে‌গে/দু‌গে দে‌বে দ‌ক্ষিণ বায়ুর কলে...

নাজা‌তের শিরায় শিরায় তুমুল বিবাদ।

 

শব্দই সঙ্গীতের জল

ঠিক সন্ধ্যা! তুমিসন্ধ্যা কিনা? যদিহও!

চৌরাহা দাঁড়িয়ে আছিদরবিগলিত;

সারাদিক দৌড়াচ্ছে সবাই।

Race, না রেসলিং তা...?

ইমেজ না ইমেজারি ভাবতে ভাবতে___

 

যখন ফুলবাড়িয়াজটজটের নিরুক্তসন্ধ্যা।

 

পরবর্তী গন্তব্যের...

মানুষ অস্থির! কিন্তু সত্যিই কি ব্যস্ত?

না-সমস্তের অস্থিরতায়

ধূলি-কুয়াশার শব্দজালে

সঞ্জাতবোধের ধারালিপিবিষণ্ণতায় ছুটছে।

 

কাছে ডাকছেমিনার

বাজছে মন্দিরে উলু

রিক্সাসাইকেলে ক্রিং

বাস-ট্রাকে হর্ণ ভেপু

মার্কেটেরগমগমাগম

বাইকের নাছোড়হর্ণ

 

ভীষণ Vission-সাইরেন___

 

পুলিশি বাঁশির শব্দ

ক্রেতা-হকারের শব্দ

টোকাই হাসির শব্দ

পথচারীর মৌন রাগ

ফেরিওয়ালার শব্দ

হেলপারের চিৎকার

 

কোচওয়ানের হাক ডাক___

 

গুলিস্থান ওভারব্রিজের নিচ

আশ্চর্য শব্দেরনির্বিকার মূর্তায়ন-সন্ধ্যা,

সেখানেই ধূলি-ধোঁয়া মানুষেরা নান্দনিক।

 

অলক্ষ্যে বাজছে কনসার্ট... তবুও

অদ্ভূত কানেক্টগ্লাস হারমোনিকার।

 

সেই আর্মি স্টেডিয়াম!

                 নৈঃশব্দ্যের শীত-চাদরে...

যখন ভৈরবী রাগ অপেক্ষায় আমি,

তুমিরাগ-কাফি শুনে...

সকল যন্ত্রণা রেখে গেছ___

কৌশকী চক্রবর্তীরবিলাবলকন্ঠে।

 

আমি ফুলবাড়িয়ার বিমূর্তশব্দের যন্ত্রণাকে

বাসের কন্টাক্টরের কাছে...

বেচে উঠে পড়লামসদরঘাটের দিশ___

 

যেখানে... বিমুর্তজলের গোপন কারুকাজ।

 

কুমেরু-সুমেরু

বিশ্বাস ও অবিশ্বাস, বিপরীতমুখী ধর্মে___

তুমি ও আমির অবস্থান;

যেখানে দিন ও রাতপরস্পরমুখী বক্রসূচ।

 

আহ্নিক গতির অক্ষ, যেমনবিদীর্ণ করে

মনোজগতের মহাদেশ।

 

সেই সত্য! অসত্যের বেড়াজালে...

অসংজ্ঞাত শূন্যে নিরন্তর বিন্দুতে মানুষ

বড়োই নিঃসঙ্গ! তবু, ঘূর্ণন প্রক্রিয়া__

অবিন্যস্তদৌড়;

 

আমি বরফাচ্ছাদিত এক মালভূমি, তুমি...

সামুদ্রিক বরফবেষ্টিত গভীর অতল।

দূর থেকে বহুদূরে

 

দিনান্তের পরিশেষে উম দেয়া পালকের

নিশ্ছিদ্র প্রহরে বিগত জন্মের পাপ-পুণ্য!

এক আধুলির হেড-টেল;

সব সত্যই মনেরআরোপিত ততটাই... বিভেদ__

 

সুমেরু-কুমেরু অন্তদেশে নিবেদন একাই ছুটছে...

নীলখেতের কৃষক। নীলগোলাপ সংরাগে।

 

মৃত সৈনিকের রাইফেল

কিছু লাগে না ভালো__

রাইফেলের ম্যাগজিনে ঘুমন্ত এক কার্তুজ।

 

অপেক্ষার তারা নির্দিষ্ট লক্ষ্যে ছুটে যাবে কখন!

 

কর্ণফুলী গাঙ পেরোলেই যে চর,

মরুভূমির ঝড়ে শুকনো হাওয়া মেখে

টাইপরাইটার আঙুলের ছোঁয়ায় বনে বেনু বাজাচ্ছে।

 

জমেছে যত কথাথ্রি-নটের নলা জানে, জানে কি নদী?

 

উজানের হাওয়ায়যদি চলে নৌকা...

মনও কি ছুটে চলে?

 

স্রোতের বিপরীত কাল-নিরুদ্দেশে!

 

খটাখট শব্দে লিখে যাই বিরহ, যাতনার বিষাদ।

 

অবচেতন মনে অঙ্গুলি হেলনে যে দিন পার করি

ঘুণাক্ষরেও কি টের পায় সত্তা!

ভেতরের ভেতর রক্তের ক্ষরণ হতে হতে নিজেকেই খুঁজছি...

 

সচেতন বোধের নিগারে ছুড়ে দেই... অলিক বুলেট।

 

মৃত সৈনিকের__

ট্রিগারে চেপে বসে কিছুটা রক্তের স্বাদ নেয়াই যায়, কি বলেনপ্রান্ত মহাজন!

 

দূর আদাবন

চিম্বুক পাহাড় রঙে সঙ্গ খুঁজে না পাই

তুমুল জয়ের জন্য...

 

রুধির রঞ্জিত যুদ্ধে...

এক অক্ষৌহিনী সৈন্য

প্রস্তুত করেছিরণে।

 

তবু... আমি পরাজিত সময়ের আবর্তনে

 

পেঁয়াজ ফুলের ঘ্রাণে

ব্রিজ পার হই, একা...

টুং টাং, ডুং ডাং

বিক্ষত শব্দের চরে।

 

পদ্মার হাওয়ায়আমি সন্তাপিত গাঙচিল

 

আমাকেই বায়ে রেখে

চলে গেছে; অনিকেত

কলমিলতায় রত

সে এক গাণ্ডিবধারী।

 

প্রতিযোগিতার ছলে লক্ষ্যভেদী যাজ্ঞসেনী

 

পাখির গুঞ্জনে ভাসে

মৃতের কুচকাওয়াজ...

শিকারির ফায়ারিংয়ে

সাদাবক উড়ে যায়...

 

দূর কোনো আদা-বনে...

ফেলে যায় পালকের স্মৃতির মর্মর।

 

মে 'be

তেজকটালে শ্রমিকঘাম গড়ছে মনটার ব্রিজের বেইজ

ভরা জোয়ারে সুবোধ-চাঁদ শান্ত সুস্থির কতক কাল?

অনাদায়ী যাপনের ঘর মাগফিরাত চায় চাষের হাল

উপবাসি কত চাঁদ-রাত। ক্ষুব্ধ- ঊর্মির মাভৈঃ তেজ।

 

চারিদিকে হতাশার ম্যাপ, নিত্য পাল্টায় ক্যালেন্ডার

অচেনা গলি কাজের পর পিত্ত-রাস্তায় পাঠায় রাজ;

অথচ খাঁটুনি, নির্মম। পয়সা নয়-ছয় সোনার তাজ?

ছেঁড়া রুটি ছিঁড়ে হরদম, কারখানার সব মেশিন তার।

 

তামাটে ঘরে চালের খুদ একাদশীর চাঁদ খনার ভোজ

তবু কোনোমতে দিন যায় কেউ তো পুষ্টির স্মারক নয়?

দিনে দিনে হাহাকার সুরভাঙবে ইস্পাত কঠিন লয়

অনাচারী পৃথিবীর বাঁধআসছে উত্তাল সময় রোজ।

 

রোগে-শোকে বাঁচে সুখ-দুখ, ধিনতাধিনধিন বাজুক স্বর

খেয়ে, না খেয়ে যে, দেয় ফল, ন্যায্য হিস্যার লড়াই কর্।

 

দিক-উত্তরাশা

যাযাবর কিচিরমিচিরে... স্বপ্ন ছুঁয়ে ছুটে চলে রাত

নাবালক পলাতক চাঁদে... সর্পিল পথের ক্ষীণ আশা;

ট্রেনের কার্নিশ বেয়ে বেয়ে দূরত্ব বাড়ায় ভালোবাসা

পাহাড়ের মাঝ বরাবর পিঞ্জরে হাঁপিয়ে কুপোকাত।

 

শীল, পাটা-পুতার জীবনে... পিষে যাই অমৃত ধুতরা

‘আশা’ এক মারাত্মক বিষ, বাঁচবেও না, মরবেও না;

নিদারুণ যুদ্ধের দামামা, কে কাকে ডিঙাবে প্ররোচনা

ক্ষয়িত চাঁদের মতো একা ছুটে চলা কি সাফল্য-ধারা?

 

মানুষের অলৌকিক আশা মহাবিশ্ব কাফনে মোড়ানো

মনের কাফেলা ছুটে চলে। নিঃসীম যাত্রার যত ক্ষত;

এক খণ্ড কাঠের আশায় সাতার কেটেছি অবিরত

কিনারের খোঁজ কেউ পায়? নাকি মরীচিকায় জড়ানো।

 

পথের ঠিকানা খুঁজে নেয় পথ। তবু কেন এত আশা?

চাহিদা ও জোগানের মতো শোধ-প্রতিশোধেই ভরসা।

 

চন্দ্রবালা

আঁধারের সুবোধ কার্নিশে উঁকি দেয় মস্ত চাঁদ

হলুদ আলোর থালা যেন; শরীর মানে না বাঁধ।

 

ভালোবেসে ঢলে পড়ে উঠোন-রোয়াকে।

শিশিরে সারাটা রাত ভেজে

নিশিথের প্রিয়তমা সেজে,

মিটিমিটি তারা হাসে ছায়াপথবাঁকে।

 

মায়াবী জ্যোৎস্নায় সারারাত আমি নিজেকে পোড়াই।

তুমি যদি চন্দ্রবালা হওআমি রাত হবো, রাই!


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন