মাহমুদ নোমানের ‘দেয়াঙ প্রিয় ধান সংখ্যা’ হাতে হাতে

মাহমুদ নোমানের ‘দেয়াঙ প্রিয় ধান সংখ্যা’ হাতে হাতে

ইয়াসিন আযীয








গতকাল সুন্দরবন কুরিয়ারের ছেলেটা এসে একটা পার্সেল ধরিয়ে দিল। একটা পাতলা খাম দেখে আমি কিছুটা অবাক হয়েছিলাম। মনে মনে ভাবলাম আমি তো গতকাল রকমারিতে একুশখানা বই অর্ডার করেছি, তাহলে...? পার্সেলটি খুলে দেখি মাহমুদ নোমান সম্পাদিত শিল্প ও সাহিত্যের কাগজ ‘দেয়াঙ’ প্রিয় ধান সংখ্যা’র লেখক কপি এসেছে। মনে মনে মাহমুদ নোমান ভাইকে ধন্যবাদ দিলামএত দ্রুত সময়ের মধ্যে সৌজন্য কপি পাঠানোর জন্য। তবে সংখ্যাটি হাতে পেয়ে অবাক হইনি। কারণ দেয়াঙ নদী সংখ্যাসহ পূর্বের কয়েকটি সংখ্যা আমার সংগ্রহে রয়েছে। তাই মাহমুদ নোমানের কাজ সম্পর্কে আমার ধারণা রয়েছে। প্রচ্ছদ থেকে শুরু করে বাইন্ডিং, সেটআপ, বিষয় ও লেখা নির্বাচন সম্পর্কে আর নতুন করে বলার নেইএক কথায় চমৎকার। কবি সাহিত্যিকদের কাছ থেকে লেখা বের করে নিতে মাহমুদ নোমানের জুড়ি মেলা ভারযা নিজের ক্ষেত্রেই দেখেছি আমি।

এবার মূল আলোচনায় আসা যাক। দেয়াঙ বরাবরই বিশেষ বিষয়ে, বিশেষ সংখ্যা করে থাকে। ‘প্রিয় ধান’ শিরোনামে ছিল এবারের দেয়াঙ বিশেষ সংখ্যা। প্রিয় ধান সংখ্যায় লিখতে গিয়ে আমি বিশেষ করে একটা বিষয় লক্ষ্য করেছিধানের সাথে আমাদের এক ধরনের প্রাণের সম্পর্ক বিদ্যমান। অপর দিকে ‘দেয়াঙ’ হচ্ছে কবি ও সম্পাদক মাহমুদ নোমানের প্রাণ। তাই বলতেই পারি দেয়াঙ এর সাথে মাহমুদ নোমানের প্রাণের সম্পর্ক রয়েছে। দেয়াঙ একটি পাহাড়ের নাম। যেটা মাহমুদ নোমানের বাড়ির কাছেই অবস্থিত। প্রতিবারই দেয়াঙ প্রকাশ করতে গেলে মাহমুদ নোমানকে আর্থিক ও অন্যান্য বিষয় টলিয়ে দিতে চায়। কিন্তু শিল্প ও সাহিত্যের কাগজ দেয়াঙ যেন পাহাড় দেয়াঙ এর মতোই অটল, অবিচল রাখে মাহমুদ নোমানের হৃদয়কে। আগেই বলেছি এবারের দেয়াঙ-এর বিশেষ আয়োজন ছিল ‘প্রিয় ধান’ নিয়ে। যেখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিলুপ্ত ও বিলুপ্তপ্রায় ধান নিয়ে লিখেছেন দেশের বিভিন্ন জেলার কবি লেখকগণ। বাংলাদেশের সাতাশটি অঞ্চলের ধান নিয়ে লিখেছেন আটাশ জন কবি-সাহিত্যিক। এক্ষেত্রে একমাত্র শরীয়তপুরের ধান নিয়ে লিখেছেন দুজন। আমি এবং কবি ও গল্পকার সুলতান মাহমুদ‌। বিষয়টি আমাদের শরীয়তপুরবাসীর জন্য কিছুটা গর্বের। তবে সংখ্যাটিতে আরো বেশি সংখ্যক জেলার কবি লেখকদের সম্পৃক্ত করতে পারলে সংখ্যাটি আরো বেশি সমৃদ্ধ হতো বলে আমার বিশ্বাস।

এই বিশেষ সংখ্যাটিতে ধান বিষয়ক প্রবন্ধ লিখেছেন এগারো জন কবি-সাহিত্যিক। কবিতা লিখেছেন তেইশ জন। এছাড়াও রয়েছে অনুবাদ কবিতা, সাক্ষাৎকার ও গল্প। এই সংখ্যাটিতে উঠে এসেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিলুপ্ত ও বিলুপ্তপ্রায়, বিরল ও ঐতিহ্যবাহী প্রজাতির ধানের কথা। উঠে এসেছে ধানের সাথে এদেশের মানুষের সম্পৃক্ততা ও সখ্যতার চিত্র। আধুনিকতার ছোঁয়ায় ধান আবাদসহ এর আগে ও পরে ধানের সাথে সম্পৃক্ত কাজের বদলে যাওয়ার সুফল ও কুফল। কৃষির প্রতি মানুষের অনিহার কারণ এবং এর ফলে কৃষি ও কৃষকের ভবিষ্যত কেমন হতে যাচ্ছে প্রভৃতি। কাদায় নেমে ধান রোপন করা কৃষককে ইট পাথরের বিল্ডিংয়ে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তি কিভাবে কর্তৃত্বের শোষণ করছেএরকম অসংখ্য বিষয়। এছাড়াও উঠে এসেছে আধুনিক জাতের ধানের উদ্ভাবন ও দেশি জাত হারিয়ে যাওয়ার তথ্য। ফলে ভবিষ্যতে সংখ্যাটি ধানবিষয়ক গবেষণার ক্ষেত্রে খুব কাজে আসবে বলে আমার বিশ্বাস। সংখ্যাটি পেতে এবং সংগ্রহে রাখতে যোগাযোগ করুন সম্পদকের সাথে। মুঠোফোন : ০১৩১৬৭৮১০২৩।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন