কবি হাসানাত লোকমান এর একগুচ্ছ দীর্ঘ কবিতা
আমাদের দেশ হোক
আমাদের দেশ হোক নদীর মতো,
যেখানে
খরস্রোত বয়ে নিয়ে যাবে
সব
অন্যায়, জীর্ণতা, দুঃখ আর বিভেদ,
তীরে
বসবে শিশুরা
সোনালি
রোদে স্নান করে
ভবিষ্যতের
স্বপ্ন আঁকবে বালির ক্যানভাসে।
আমাদের
দেশ হোক আকাশের মতো,
যেখানে
পাখির ডানায় লেখা থাকবে
স্বাধীনতার
মহাকাব্য।
কোনো
সীমানা থাকবে না,
থাকবে
কেবল উড়ে যাওয়ার অবারিত দিশা।
আমাদের
দেশ হোক মাটির মতো,
যার
প্রতিটি দানায়
খুঁজে
পাওয়া যাবে
কৃষকের
ঘামের গন্ধ,
যে
মাটি ভেঙে তুলবে
সবুজের
অরণ্য আর সোনালি ফসল।
আর
মাটির মমতায় থাকবে
সংগ্রামের
ইতিহাস।
আমাদের
দেশ হোক শিশিরের মতো,
যার
প্রতিটি ফোঁটায়
উজ্জ্বল
হবে সহনশীলতার প্রতিচ্ছবি।
যেখানে
ভোরের আলোয়
ঝলমল
করবে শান্তির প্রতিটি বিন্দু।
সবাই
হাত ধরাধরি করে হাঁটবে
মানবতার
সবুজ পথে।
আমাদের
দেশ হোক কবিতার মতো,
যার
প্রতিটি শব্দে ফুটে উঠবে
ভালোবাসা,
সমতা, আর সত্যের জ্যোতি,
যেখানে
মানুষ হবে মানুষ,
ভালোবাসা
তার ভাষা
ধর্ম
হবে শুধু হৃদয়ের আলো।
আমাদের
দেশ হোক এমন এক চিত্রকল্প
যেখানে
পাহাড়ের উচ্চতা
বইবে
গর্বের বাতাস,
সমুদ্রের
ঢেউয়ে বাজবে
সংগ্রামের
সুর
আর
রাত্রির তারারা
শিখাবে
একসাথে জ্বলে ওঠার মহিমা।
আমাদের
দেশ হোক সেই কল্পনার বাগান,
যেখানে
প্রতিটি ফুলে থাকবে
স্বপ্নের
গন্ধ,
আর
প্রতিটি পাখি শোনাবে
আগামীর
আহ্বান।
বৈষম্যের সীমানা ভেঙে
বৈষম্যের দেয়ালগুলো দীর্ঘ আর দৃঢ় কালো পাথর
ঘরে
ঘরে বিষের বাঁশি, নীল নীল ভয়াল ফণা
অন্ধকারে
পড়ে আছে ভাগ্যহারা সন্তানের আগামী
উদিত
সূর্যের দেশ কে জানে কতদূর
কে
জানে কতদূর আলোর বাড়ি, শুভ্র আকাশের হাসি।
সূর্য
তো অপ্রতিরোধ্য এবং সত্যও মহিমাময়, মেঘ আর এমন কী পারে
মানুষ
আর মানবতা শেষাবধি প্রগল্ভ, ভাসে, ভাসায় ক্ষিপ্রতায়।
আমরা
কতদিন শুনব, কতজনের অসহায় অব্যক্ত কান্না?
রঙ,
জাত, ধর্মের নামে তপ্ত দহন, বিষাক্ত বিবাদ, বিসম্বাদ—
কে
করে, কেমন করে এমন বিভাজন পৃথিবী ও মানুষের পথ
আর
টুকরো টুকরো আত্মার ক্রন্দনে পুড়ে সভ্যতার মুখ—
অথচ
কথা ছিলো আদিগন্ত আকাশের মত সদা সর্বত্র সকলের অধিকার।
আমাদের
রক্ত কি আলাদা রঙের?
আমাদের
দুঃখের কি কোনো ভাষা নেই নিজের পরিচয় লিপিবদ্ধ করার?
তবে
কেন এই ব্যবধান, এই দূরত্ব?
যেখানে
শিশুরা খেলে, সেখানেই বাগান ফোটে,
যেখানে
মানুষ হাসে সৌরভে, সেখানেই তো জমে ওঠে আলো।
তবে
কেন বৈষম্যের ব্যর্থ বেড়া দাঁড়িয়ে থাকে দাঁত কেলিয়ে
একে
অপরের দিকে তাকাই যেনো মানুষ আর এলিয়েন।
আমাদের
বিভাজনের ক্ষতগুলো ডেটল-ব্যাণ্ডিজে সেরে তুলতে হবে
বাড়াতে
হবে দীর্ঘ হাত সব মানুষের দরজার কড়ায়
মুছে
দিতে হবে পরস্পরের নোনাজল হৃদয় ঢেলে
আমাদের
লেখা হবে একটি মাত্র গল্প, নাম তার মানুষ, কেবলই মানুষ।
আমরা
মানুষ,
সীমানাহীন,
ভেদাভেদহীন মানুষ, মানুষ এবং মানুষ।
আমরা
গড়ব আমাদের মানবিক পৃথিবী,
আমরা
যৌথ খামারে গড়ে তুলবো একটি মাত্র আলোর প্রভাত
হাস্যেজ্জ্বল
সকল প্রান্তর থেকে ঠিকরে পড়বে অযুত নিযুত ফুলের ঘ্রাণ
আর
জেগে উঠবে আগামী দিনের সোনালি আভা হৃদয়ে হৃদয়ে
খসে
পড়বে কাঁটাতার, পথ হবে সরল মাতৃদুগ্ধ রঙ।
অভিসম্পাতের
প্রদাহ
পুড়ে যাক অহংকারের নিন্দিত নদী,
যে
নদীর স্রোতে ডুবে গেছে মানবতার শপথ।
ভেঙে
যাক বেদনায় বিভাসিত দাঁত,
যে
দাঁতে রক্তাক্ত হয়েছে ন্যায়ের কণ্ঠস্বর।
ধ্বসে
যাক দুষ্ট স্বপ্নের পাহাড়,
যেখানে
মানুষের হৃদয় বিক্রি হয় কয়েনের ধ্বনিতে।
জ্বলুক
আলোর শিখা—
যেখানে
ছায়া কেবলই আশ্রয়ের প্রতিশ্রুতি,
অন্ধকারের
দাসত্ব নয়।
গড়ে
উঠুক এমন সমাজ,
যেখানে
প্রতিটি কণ্ঠ একটি গানের মতো—
স্বাধীন,
স্বচ্ছ, আর শ্রুতিমধুর।
ঘুমিয়ে
থাকা বিবেককে জাগ্রত করুক অভিসম্পাতের এই মন্ত্র,
বিলীন
করুক সেই অন্ধ দেয়াল,
যে
দেয়াল মানুষের হাত থেকে হাতকে আলাদা করে।
তুলে
ধরুক এক নতুন ভোর,
যেখানে
শিশির বিন্দুতে লেখা থাকবে সমতার কবিতা।
অহংকারের
নিন্দিত নদীর বদলে
বইবে
করুণার স্বচ্ছ স্রোত।
বেদনার
দাঁতের বদলে
উঁকি
দেবে ভালোবাসার সাদা দাঁতের হাসি।
আর
দুষ্ট স্বপ্নের ধ্বংসস্তূপে
উত্থান
হবে এক নব স্বপ্নের—
যেখানে
প্রত্যেকটি মুখ খুঁজে পাবে শান্তির আলিঙ্গন।
হে
মানবতা,
তুমি
ফেরো তোমার নিজের পথে,
অভিসম্পাতের
এই প্রদাহে পোড়াও সব কিছু,
যা
তোমাকে কলঙ্কিত করেছে।
তারপর
গড়ে ওঠুক এক নীলাভ পৃথিবী,
যেখানে
সময়ও মাথা নোয়াবে মানবতার পায়ে।
ভালোবাসার ফুল ফুটুক
ভালোবাসার ফুল ফুটুক প্রতিটি ভোরে,
যেন
রোদ্দুরে চমকে ওঠে শিশির বিন্দুর মতো।
চাঁদ
উঠুক প্রতিটি রাতে,
যেন
আলো ছুঁয়ে যায় আঁধারের গভীরতম স্পন্দনে।
জীবনকে
দেখি নতুন চোখে,
যেখানে
প্রতিটি মুহূর্ত একেকটি কবিতা,
যেখানে
প্রতিটি শ্বাস বয়ে আনে
একটি
সুরেলা স্বপ্ন।
আমরা
কি পারি না এই পৃথিবীকে
ভালোবেসে
আঁকতে এক নতুন ছবি?
যেখানে
মানুষ মানুষকে চেনে ভালোবাসায়,
যেখানে
যুদ্ধের আওয়াজ চাপা পড়ে
একটি
শিশুর হাসির নিচে।
চলো,
প্রতিজ্ঞা করি—
আমাদের
হৃদয়ে জন্মাবে
অসংখ্য
ফুল,
যে
ফুলের নাম ‘মানবতা’,
যে
ফুলের গন্ধ ছড়িয়ে পড়বে
বিশ্বের
সমস্ত সীমান্তে।
ভালোবাসার
ফুল ফুটুক প্রতিটি মনে,
চাঁদ
উঠুক প্রতিটি আকাশে।
জীবনের
এই অভিপ্রায়ে
আমরা
হব এক নিত্য নতুন সূচনা।
স্বপ্নের সমন্বয়ে
এসো স্বপ্নের সমন্বয় করি, এসো দেশ গড়ি
এগিয়ে
চলি, প্রজ্বলিত হয়ে,
নতুন
সূর্যের আলো, নতুন শিখা,
চলে
আসুক প্রত্যেকটি মানুষ,
মুখে
হাসি, মনে বিশ্বাস, গড়ে তুলি এক স্বপ্নের পৃথিবী।
আমরা
যদি একে অপরের হাত ধরি
হৃদয়ের
প্রতিটি ধ্বনিতে প্রতিধ্বনিত হবে আজানের সুর,
আমরা
এক সাথে গাইবো জীবনের গান
বিহঙ্গের
মত উড়বো, আকাশে সাজাবো নতুন নীল দিগন্ত।
নদী
হয়ে বয়ে চলবো, থামবো না কখনো,
মাটির
গন্ধে গাঁথবো আমাদের স্বপ্ন,
পাহাড়ের
মত দৃঢ়, সমুদ্রের মত গভীর,
দেশের
প্রতিটি কোণে স্থাপন করবো আমাদের প্রেম।
এখানে
হবে সব মানুষ সমান,
শান্তির
আগুনে পুড়ে যাবে বৈষম্য, বিভেদ,
শব্দ
হবে সুর, হস্ত হবে তুলি,
ছবির
মাঝে আঁকবো আমাদের একীভূত জাতির চিত্র।
এতটুকু
নয়, এক নতুন পৃথিবী,
প্রতিটি
অঙ্গনে, প্রতিটি বাড়িতে,
নতুন
কিরণ, নতুন আলো,
দেশ
গড়তে এগিয়ে আসো সবাই।
যতটুকু
হৃদয়ে আশা, তা দেবে শক্তি,
আমরা
সবাই যদি একযোগী হই,
সব
বাধা পেরিয়ে, এক অঙ্গনে মিলিত হয়ে
গড়বো
এক নতুন দেশ, এক নতুন স্বপ্ন।
শান্তি আসুক সবার নামে
ঝরাপাতার রাত্রি শেষে,
শান্তি-কুঁড়ি
জাগুক হেসে।
শান্তি
আসুক নীরব রাতে
ঝিকিমিকি
তারার সাথে
শান্তি
আসুক শক্ত হাতে।
শান্তি
আসুক নদীর বানে
সূর্যছোঁয়া
মাটির ঘ্রাণে
জোয়ার
ভাটার আপন টানে
প্রেমের
দোলা জাগুক প্রাণে।
শান্তি
আসুক মলিন মুখে
স্বপ্ন
ফুটুক আলোর বুকে।
শান্তি
আসুক শিশুর চোখে,
শিশির
ঝরা শিউলি শোকে।
শান্তি
আসুক বনের ছায়ে,
শীতল
নদীর স্রোতের পায়ে।
অন্ধকারের
বদ্ধ ঘরে,
শান্তি
আসুক ঝড়ের স্বরে।
শান্তি
আসুক রাত-দুপুরে
ভালোবাসার
অন্তঃপুরে
শান্তি
ছড়াক স্বদেশ জুড়ে।
শান্তি
আসুক ঝিনুক ঝিলে
তারা
ভরা আকাশ নীলে
মুখরিত
শাপলা বিলে।
শান্তি
আসুক মধুর গলায়
স্বপ্ন
ভাসাক নদীর তলায়।
কুহুকাকের
মিষ্টি ডাকে
কৃষ্ণচূড়ার
পাতার ফাঁকে
শান্তি
নামুক নদীর বাঁকে।
ভালোবাসার
আলোয় জ্বলে
ব্যথার
বরফ গলে গলে
শান্তি
আসুক ফুলে ফলে।
শান্তি
আসুক বইয়ের পাতায়,
জ্ঞানের
আলো হৃদয় খাতায়।
পোড়া
মাটি ইটের ভাটায়।
করুণ
বাঁশির নাগীন সুরে
শান্তি
আসুক ভোরের পুরে।
কাঁদা-মাটি
শ্যামল গ্রামে,
সুনীল
আকাশ মেঘের খামে
শান্তি
আসুক সবার নামে।
আলো ও আত্মার দহন
নক্ষত্রের কান্না শুনে জেগে উঠি,
গভীর
রাতের একাকিত্বে,
মনে
হয় আসমানের দরজা খুলে গেছে—
সেখানে
আলোর মাঝে কেউ ফিসফিস করে বলে,
“ক্ষমা
চাও।”
আমি
দেখি,
দুটি
পর্দা ঝুলে আছে আমার সামনে—
একটি
সাদা, একটি কালো।
সাদার
মাঝে জ্বলজ্বলে এক আয়াত—
“ইন্নাল্লাহ
গফুরুর রহিম।”
কালোর
মাঝে আঁকা অপরাধের ছায়া,
আমার
মনের গোপন দরজা খুলে দেয়।
পাহাড়ের
ওপারে কেউ আজান দিচ্ছে—
আলোর
ছায়া এসে মিশে যায় ধূলিকণায়।
আমি
হাঁটু গেঁড়ে বসে থাকি,
শূন্য
হাত তুলে দেখি
হাওয়ায়
ভাসছে আমার অপরাধের গন্ধ।
তখনই
যেন আসমান ফাটে,
বৃষ্টির
ফোঁটার মতো ঝরে পড়ে আয়াত—
“লা
তাকনাতু মিন রাহমাতিল্লাহ।”
আমি
ভেঙে যাই,
আমার
ভেতরের সমস্ত পাপ,
সমস্ত
অহংকার ধুয়ে যায়।
একটি
দরজা খুলে যায় আমার মনে,
তৃষ্ণার্ত
হৃদয়ে আমি ক্ষমা চেয়ে বলি—
“আমার
ভুলগুলোকে পুড়িয়ে দাও,
তোমার
আলোর মাঝে আমাকে শুদ্ধ করো।”
শেষ
স্তবকের পরিমার্জিত রূপ
তারপর—
আসমানের
বুক চিরে নেমে আসে এক আঙুল আলোর,
যা
স্পর্শ করে আমার হৃদয়ের গভীরতম ক্ষত।
বাতাসে
ভেসে আসে অজানা এক প্রতিশ্রুতি—
“তোমাকে
ক্ষমা করেছি।”
আমি
দেখি,
আমার
পাপেরা পরিণত হয়েছে শীতল কুয়াশায়,
যা
মিশে যাচ্ছে প্রভাতের আলোয়।
হৃদয়ের
রক্তক্ষরণ থেমে যায় ধীরে ধীরে,
জন্ম
নেয় এক নতুন আলো—
আলো,
যা আমাকে ভেঙে গড়ে তোলে।
ক্ষমা—
এ
যেন এক মহাজাগতিক বিস্ময়,
যেখানে
আত্মা আর আসমান মিলেমিশে
জন্ম
দেয় এক অনন্ত শুরু।
বাংলাদেশ
বাংলাদেশ,
তুমি
আমার হৃদয়ের অবিচ্ছিন্ন বাঁধন,
তুমি
আমার মাটির ঘ্রাণে মিশে থাকা অবিনশ্বর সুরের ধ্বনি
তুমি
বৃষ্টির প্রথম ফোঁটায় মনে জমে থাকা ভেজা স্মৃতি,
তুমি
গাঢ় সবুজ রঙে মোড়ানো এক শান্তির নীড়,
যেখানে
প্রথম পাঠশালা, জীবনের আনন্দ সবক।
তুমি
আছো ধানখেতে, কচিপাতার ভাঙা ঢেউয়ে ঢেউয়ে
প্রকৃতির
বাঁকে বাঁকে রেখেছো আমায় নিবিড় আলিঙ্গনে,
তুমি
আছো গ্রামবাংলার হালটে, মেঠো পথে, রাখালের বাঁশির সুরে
যেখানে
পা ফেলে দাদিমার কণ্ঠ শুনি, শিকড়ের গল্পে ভাসি।
তোমার
মাটির পরতে লুকিয়ে আছে জীবনের অমোঘ জীয়ন কাঠি,
তোমার
স্রোতস্বিনীর বুকে জমা আছে দুরন্ত দিনের অবাধ সাঁতার
তুমি
আছো দূর পাহাড়ের চূড়ায়,
মেঘের
চুম্বনসিক্ত নীলগিরি থেকে সাগরের গভীরতায়,
তোমার
প্রতিটি রূপ নতুন কবিতার ক্যানভাস, এস এম সুলতানের তুলির আঁচড়
তোমার
লতা-গুল্ম আল মাহমুদের অমর কাব্য ‘সোনালি কাবিন'।
তুমি
আছো সাঁওতাল যুবতীর মতো সবুজ চায়ের বাগানে
যেখানে
পাতার ফাঁকে ইশারায় শিস দিয়ে যায় একটি হলুদ রঙের পাখি।
তুমি
আছো প্রেমিকার বুকের মতো অবারিত সাগর সৈকতে
যেখানে
আছড়ে পড়ে স্বাধীনতার গান, যুদ্ধের গর্জন,
তুমি
আছো ম্যানগ্রোভ—সুন্দরবনের গহীন গভীরে
যেখানে
নির্ভীক বাঘের ডাকে, ময়ালের মিছিলে মিশে আছে আমাদের প্রত্যয়ী সত্তা।
তুমি
পাখির ডাকে, রূপালি ভোরের রোদে ছড়িয়ে দাও—
আমাদের
স্বপ্ন আর আশার উদ্দীপ্ত ভাষা।
তুমি
আছো বাংলার কৃষকের তামাটে দেহের ঘামে
যে
ঘাম থেকে হেসে উঠে আগাম শস্যের মাঠ, সয়ম্ভর আগামী।
তুমি
আছো জেলেনৌকায়, মাস্তুলে জমে থাকা সংগ্রামের গল্পে
যেখানে
জীবন নতুন মোহনার দুয়ার খুলে হাসে।
তুমি
আছো সূর্যালোকের ফলায়, সোনালি ধানের মেলায়,
আছো
মাতৃদুগ্ধ ধারায়, সন্তানের অপার ভালোবাসায়।
তুমি
আছো বায়ান্নের মিছিলে, রাজপথ কাঁপানো মুখরিত শ্লোগানে
আছো
প্রতিটি শহীদের রক্ত থেকে উৎসারিত টগবগে লাল গল্পে।
তুমি
আছো বঞ্চিত মানবের অধিকারের করুণ ইতিহাস হয়ে
আছো
আমার বাংলা আর বাঙালির প্রিয় উচ্চারণে, বর্ণমালার অহংকার হয়ে।
বাংলাদেশ,
তুমি আমার ভালোবাসার তেরোশত নদী,
তোমার
মাটির প্রতিটি কণা মনিহার হয়ে কোমল হাওয়ায় দুলে,
তুমি
আছো আমার নিঃশ্বাসে, প্রাণের স্পন্দনে, প্রতিটি সৃষ্টিতে,
তুমি
অজস্র জনতার উৎসর্গিত ভালোবাসার নাম
কাঙ্খিত
নতুন দেশ, প্রিয় বাংলা হৃদয়ের উল্লাসে।
প্রতিটি কবিতাই চমাৎকার।
উত্তরমুছুন