কীর্তিনাশার কাব্য :: অনলাইন সংখ্যা-০১

কীর্তিনাশার কাব্য :: অনলাইন সংখ্যা-০১

সম্পাদকীয়---

কথা ছিল কীর্তিনাশার কাব্যের ছোটো ছোটো কিছু সংখ্যা করার। করোনাসহ বিভিন্ন কারণে কীর্তিনাশার কাব্যের ধারাবাহিকতায় যে ছেদ পড়ে গিয়েছিল সেই ছেদ পুষিয়ে ওঠার জন্য। কিন্তু সেই কার্যক্রমেও কিছুটা বাধাগ্রস্ত হলো বিভিন্ন কারণে। তারপরও দেরিতে হলেও শুধু কবিতার আয়োজনে কীর্তিনাশার কাব্যের আরও একটি সংখ্যা কাগজ এবং অনলাইনে একসাথে প্রকাশিত হলো। আশার কথা হচ্ছে আমাদের কাগজটি গুগল সার্চ কনসোলসহ গুগলের অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে ইতিমধ্যে সংযুক্ত হয়ে গেছে; ফলে পৃথিবীর যে কোনো স্থান থেকে যে কেউ যে কোনো সময়ে আমাদের কাগজটি অনলাইনে পাঠ করতে পারছেন। কীর্তিনাশার কাব্যের পুরনো সংখ্যার গুরুত্বপূর্ণ কিছু লেখা অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে। পাশাপাশি নতুন নতুন লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। যার ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে আশা করছি। চলতি সংখ্যাটির জন্য যারা লেখা ও বিজ্ঞাপন দিয়ে সহযোগিতা করেছেন তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। 

লেখক তালিকা :  শ্যামসুন্দর দেবনাথ ।। দেওয়ান আজিজ।। খান মেহেদী মিজান।। মির্জা হজরত সাইজী ।। ফজলুল হক।। শাহ জালাল মিয়া।। মো: মাহবুবুল আলম।। ফকির আহমদ।। তোফায়েল তফাজ্জল ।। ঋজু রেজওয়ান।। উদ্দিন জালাল।। গেরিলা আজাদ।। দয়াময় পোদ্দার।। কৃষক মাহমুদ।। নজরুল ইসলরাম শান্তু ।। সুপান্থ মিজান।। খান নজরুল ইসলাম।। সুলতান মাহমুদ।। ইব্রাহিম খলিল।। সুদর্শন বাছার ।। ডিএম শফিকুল ইসলাম।। রুদ্রসাগর ।। নাজমুল হক ।। ফকির শাহিন শাহ্ ।। বিএম আরিফ।। শাহীন হোসেন।। হোসাইন মুহা: দেলোয়ার ।। জান্নাতুল ফেরদৌস মুক্তা ।। মানিক লাল সাধু।। মু মু হাসান ।। আবুল কালাম মৃধা ।। আসাদুল্লাহ কাওসার 

অভিসম্পাত !!

শ্যামসুন্দর দেবনাথ 

 

মেঘচাদরে ঢেকে গ্যাছে রোদেলা দুপুর--

অমাবস্যা রাত। আলোখোর পেত্মী প্রচুর।

তারা, জোনাকি, পূর্ণিমা ঘুমে। নামে অসুর

মেঘ শেষে মেঘ। রাস্তায় হিংস্র কুকুর।

 

ঝড়ো হাওয়া। মাটিকাটা বৃষ্টি। বোবামুখ।

তির্যক হ্যাচলা। শিল্প ধ্বস্ত। আসুরি সুখ।

কখন রাত! কখন দিন! সভয়ে বুক!

ঘেউ-মিউ শব্দ ঘরে। খাবার চুকচুক!

 

হিংস্র বৈষম্য! বিকৃত তাণ্ডব শিকার!

জজবা ঝড়। দুর্বল বঞ্চিত অধিকার!

মধুমাখা প্রীতি-বিষ। কখনো উদ্গার।

সূর্য নির্ভর আস্থারা। লেবাসি অঙ্গীকার।

 

মেঘেরা আসে। বাতাসে ঝরে। দিনেরা ফোটে।

হাতে ‘পাঁচ’। মনে ‘এক’। কথায় ‘দুই’ ঠোঁটে।

শিকড়ে ঘৃণা। পাতা-ডালে জিঘাংসু জোটে।

নিত্য নাহি সমান। কর্মফল ভেসে ওঠে।

:::::::


আযানের মধু সুর

দেওয়ান আজিজ

 

রাত শেষে ভোর আসে

পৃথিবীটা সুখে ভাসে

আযানের সুরে

আলোকিত হয় সব

স্বর্গীয় নূরে।

 

ঝিরঝিরে মিহিস্বরে

শিশিরের ফোঁটা ঝরে

টুপ টুপ টুপ

রঙধনু রঙে সাজে

প্রকৃতির রূপ।

 

গানে গানে পাখি জাগে

হলদে কুসুম বাগে

ফোটে কত ফুল

ঢেউ তুলে ছোটে নদী

ছুঁয়ে ছুঁয়ে কূল।

 

উম কাটে ঘুম ভাঙে

খুশিতে হৃদয় রাঙে

দূর হয় কালো

ফুরফুরে মন নাচে

কী যে লাগে ভালো।

 

চোখ খুলে কান তুলে

অলসতা সব ভুলে

শুনি আহা! যত

আযানের মধু সুর

ভালোলাগে তত।

:::::::


শিক্ষকের কণ্ঠস্বর

খান মেহেদী মিজান

 

কণ্ঠ চেপে ধরলে কি আর বেরয় কণ্ঠস্বর?

মাথার ওপর আজও শোষক করে আছে ভর।

শিক্ষায় নাকি নতুন সমাজ গড়ার অঙ্গীকার,

একবিংশেও প্রহসনের এমন ভঙ্গি কার?

জীবন যাত্রায় মান নেইকো নেই নিরাপত্তা

আসতে চায় না এই পেশাতে বিকিয়ে স্বত্ত্বা!

শিক্ষক দিয়ে করিয়ে র‌্যালি আসলে ভাষণে

শিক্ষকেরা পায় না চেয়ার ভালো আসনে!

শিক্ষক যারা বেসরকারি মনে হচ্ছে বেদরকারি

এই পেশাতে এসে যেন করেছে ভুল মস্ত ভারি।

কী হবে তাই দিবস দিয়ে মর্যাদাটা কেড়ে নিয়ে

ভরে কথার ঝুলি,

বৈষম্য সব দূর করে সোনার বাংলা নিতে গড়ে

এসো আওয়াজ তুলি।

ঈদ উৎসবে মুখ হাসে না মেধাবীরা তাই আসে না

এমন হেলা নেইকো কোনো দেশে,

জীবনযাত্রায় বাড়িয়ে মান নিরাপত্তা একটু বাড়ান

মেধাবী মুখ আসবে ভালোবেসে।

:::::::


খিড়কি দুয়ার খোলা

মির্জা হজরত সাইজী 

 

খিড়কি দুয়ার খোলাই আছে 

আইসো বন্ধু রাত বিরাতে

আহা! তুমি যদি নাইবা এলে

দু:খ পোহাবো কাহার সাথে।

 

পূবাল হাওয়া চুম দিলো ওই

মৃগ-নাভী কস্তরিতে

হৃদয় কেটে ফালাফালা

বিছিয়ে দিছি তস্তরিতে। 

 

নাইবা যদি আসো তুমি

পঞ্চমী চাঁদ আসবে ঠিকই 

ঘরের কোনের ধূপদানিতে

পুড়বে এ মন ধিকিধিকি।। 

 

আসবে যদি এসেই দেখো

খিড়কি দুয়ার সবই খোলা

সাত জনমের দু:খ আমার

তোমার জন্য শিকোয় তোলা।

:::::::


এখনও রয়েছে আলো          

ফজলুল হক

 

আরো একদিন এমন বৃষ্টিস্নাত রাত আসবে,

আরো একদিন তুমুল বৃষ্টি নামবে মেঠোপথে,

শহরের অলিগলিতে,

এমন বৃষ্টিমূখর রাত, সান্ধ্য কোলাহল,

এমন নিমগ্ন দিনে, খুব করে আমায় তোমার মনে পড়বে।

জানালার গ্রীল গলে যতদূর দৃষ্টি দেবে,

যতটুকু শুনবে বৃষ্টির গান,

অঝোর বর্ষায় বৃষ্টির জলের মতোন তুমিও তখন গলে যাবে।

 

আরো একদিন, হয়তো এমন করেই 

স্ফীত হবে ভাদ্রের ভরা যৌবন।

আরো একবার বান আসবে কীর্তিনাশার দুকূল ছেপে।

সবুজ ঘাসের ক্ষেতে,

আরো একবার তোমার দুচোখে নামবে শ্রাবনধারা

নীল আকাশের কোলে তখন জাগবে সাদা মেঘের ভেলা।

কূলে কূলে দোল খাবে শুভ্র কাশের দল।

নদীর জলের মতো তুমিও ভাসবে আরেক জোয়ারে।

 

আরো একবার খুব, খুব করে হয়তো আমায় ভাববে তুমি।

আরো একবার ফিরে আসবে তীব্র দহনকাল।

তারপর জানতে পারবে, 

আমার বাগানের গোলাপগুলো নিষ্পাপ ছিল।

আমার আকাশেই ফুটফুটে জোৎস্না ছিল।

তুমি জানবে, আমার আবাসেই ভালোবাসার সুবাস ছিল।

ততক্ষণে স্টেশনের শেষ গাড়ির হুইসেল বিদীর্ণ করবে রাতের প্রহর

তারপর কেবলই অন্ধকার, তীব্র দহনকাল।

:::::::


আপেক্ষিকতা

শাহ জালাল মিয়া

 

সত্য কি আপেক্ষিক!?

কতো অক্ষয় তত্ত্বতথ্য! 

ইতিহাস-ইতিবৃত্ত...

অচল হয়েছে

কালাবর্তে!!

 

পৃথিবীকেন্দ্রিক বিশ্বতত্ত্ব

চার্চের জীবন-ব্যবস্থা

একচ্ছত্র রাজতন্ত্র

প্রত্যাখ্যাত হয়!

 

পলিদ্বীপ ভাঙে।জাগে

কাদাটে নতুন দ্বীপ!

কখনো পুরাতনরা

ফিরে আসে 

নতুনরূপে !

:::::::


অবশেষ

মোঃ মাহবুবুল আলম

 

একদিন ধীরে ধীরে তোমার সকল গহনায় শ্যাওলা

সব মোহনায় ঢেউয়ের তালে তালে জমবে পলির আস্তরণ

উদ্ধত ফুঁসে ওঠা নদীর পাড় হবে বিরান মরুভূমি কিংবা

মৃতবৎ পড়ে থাকা দুর্বাদল দখল নেবে তোমার গৌরবের বেলাভূমি

যে অহংকার তোমার বুকের ছাতা ফুলিয়েছে দ্বিগুণ

তারা ধোঁয়ার কুণ্ডলীতে পরিণত হবে

আষ্টেপৃষ্ঠে বেষ্টন করবে তোমার শ্বাস-প্রশ্বাস

বুকের পাঁজরের নিচে বাসা বাঁধবে ঘুণ আর উইপোকা

ঝরঝর করে খসে পড়বে তোমার প্রিয় দেয়ালের সব রং-বেরঙের নকশা

মগজের চারপাশে যে উষ্ণতা

কদমের রোঁয়ার মতো খাড়া দাড়িয়ে থেকেছে যুগের পর যুগ

তারা জল হয়ে গড়িয়ে পড়বে তোমার অমসৃণ চিবুক বেয়ে

নোনা জলের স্বাদ তোমাকে বুঝিয়ে দেবে

ভালোবাসার বিপরীতে অহংকার চলে না

নশ্বর পৃথিবীতে প্রেমই অবিনশ্বর।

:::::::


কীর্তিনাশা

ফকির আহমদ

 

পদ্মা তুমিতুমিই কীর্তিনাশা

তছনছ করেছ সব স্বপ্ন আাশা

যেখানে ছিল ফসলের জমি,

বাড়িঘরমনুষ্য কোলাহল ঠাসা

সেখানে আজ আমি জলে ভাসা।

:::::::


শতায়ু-সম্পর্ক

তোফায়েল তফাজ্জল

 

জানা থাকলেও ঘাঁটবে না দুর্বলতা,  খুঁচাবে না গতদিন।

ভুলের জঙ্গল চষে কুড়িয়ে আনবে না সেই পড়ে থাকা কথা 

যা উপরে উঠিয়ে ধপাস ছেড়ে দিলে ভেঙে পড়ে 

তিলে তিলে গড়ে ওঠা স্তর, সমীহ করার জায়গা,   

মনে জমে মেঘ, হতে হয় নতমুখী ।

হালেও পা ফেলবে ডানবাম বুঝে, হোঁচট না খায় কান,

কাটা ঘায়ে না পড়ে লবণ;  

আচরণে না থাকে চোরকাঁটা । 

পাতাগুলো নড়াচড়ার কারণে তৈরি হওয়া ফাঁকে 

উড়ে গিয়ে যাতে সুখ-সুবিধা করতে না পারে ছিদ্রান্বেষী-দৃষ্টি।  

নখ-বাঁকা প্রশ্নটাও করা থেকে থাকবে দূরে   

যদি জিইয়ে রাখতে চাও বিনে সুতো টান।

  

কাঙ্ক্ষিতজনের মাথা হেঁট হয়, বিগড়ে গিয়ে ফুটি ফাটা হয়   

করবে না এমন কিছু কারো চাপে পড়ে, গোচরে বা অগোচরে। 

তাকাবে না বাতাসে ভাজির গন্ধ পাওয়া বিড়াল তপস্বী-চোখে ।

সুচালো শিঙের গুতো খায়, চিৎপটাং হয়ে পড়ে 

এমন প্রসঙ্গ অবতারণাকে ভাববে জ্বলন্ত আগুন, গা ঘেঁষলেই পুড়বে।

তার কুল জড়িত করার 

ছেঁড়া পাতায় বা তূণীরে দেবে না হাত 

যদিও বিপদ চিতা দৌড়ে এসে হয় মুখোমুখি।

তবেই দেখবে না উটকো ভূত পথেঘাটে,

বিশ্বাসে নিঃশ্বাসে ভুলেও লাগবে না সুতোগাছি খুলে যাওয়া প্যাঁচ।

সম্পর্কও থাকবে হৃষ্টপুষ্ট বা হবে শতায়ু।

:::::::


নেমন্তন

ঋজু রেজওয়ান

 

আমগো বা‌ড়ি প্রিয়কা‌ঠি আ‌ড়িয়াল খাঁ’র পা‌শে

হেই হানে‌তে অভি‌জিৎ দাস খুল্লু খুল্লু কা‌শে।

আইতে পার ভয় না পে‌লে দাওয়াত রইল কাইল

রাইন্ধা রাহুম পুঁটি ভাজা, চেঁপা শুট‌কি, ডাইল।

 

খুঁইজ‌্যা য‌দি না পাও বা‌ড়ি কি কবো আর, পু‌রি

সূর্য যে দিক হেলান দি‌বো হে‌দিক ছুটবা ধ‌রি।

পথের মইধ্যে দেখবা তু‌মি ভৃগুরা‌জের ফুল

শু‌ইয়া আ‌ছে মা‌টির ল‌গে বে‌লি-জুঁই ও বকুল।

 

দূ‌রেত ত‌নে দেখা যায় যে বট-পাকু‌ড়ের ঝু‌রি

তার থাইক্কা বিশ কদম দূরে পাইবা এক বু‌ড়ি।

সেই বু‌ড়িটা মাঁচায় ব‌ইসা খা‌য় যে পা‌নের খি‌লি

দুষ্টরা সব গোল হইয়া এক, মাথায় কা‌টে বি‌লি।

 

যত্তই জিগাও কইব না সে মু‌খেই কুলুপ আঁটা

খই-বাতাসা লইয়া যাই‌য়ো স‌ঙ্গে পা‌নের বাঁটা।

দেখবা তু‌মি হেই খু‌শি‌তে লইয়া যাইব বাড়ি

হাঁট‌তে হইব আর কিছু দূর, তা‌লের সা‌রি সা‌রি।

 

তা‌লের সা‌রি প‌রেই যাইবা খেঁজুর গা‌ছের গাঁয়

হেই হানেতেই আমার বা‌ড়ি; ডাক‌ব ময়না, আয়।

ছ‌নের ছাওয়া ছোট্ট বা‌ড়ি, ঘ‌রের পাশেই খড়

হেই হা‌নে‌তেই ফুঁইট্টা আছে, ছ‌বির মতন ঘর।

:::::::



কীর্তিনাশা

উদ্দিন জালাল

 

কতো কীর্তি বিনাশ করে

হইছে কীর্তিনাশা

বয়ে চলা তীব্র স্রোতে

কেড়ে নিছে আশা।

 

এই নদীতে কুমির ছিল

ছিল হিংস্র প্রাণী

নাইতে নেমে কতো লোকের

প্রাণ হয়েছে হানি।

 

বইলে বাতাস ভীষণ জোড়ে

ডুবতো জাহাজ ঢেউয়ের তোড়ে।

একূল ওকূল দিতে পাড়ি

কাঁপতো মাঝির হাতের দাঁড়ি।

 

কীর্তিনাশায় চর জেগেছে

নেই সে জোয়ার ভাটা

এপাড় থেকে ওপাড় যেতে

পায়ে লাগে হাঁটা।

 

এমনি করে নদীগুলো

যায় হারিয়ে যদি

নদীমাতৃক বাংলাদেশে

কোথায় পাবো নদী ।

:::::::


কবিরা দেখতে কেমন

গেরিলা আজাদ

 

আসলে কবিদের দেখতে কেমন?

কেমন তাদের পোশাক-আশাক।

তারা কী খায়, কী করে।

এলোমেলো চুল, খোঁচাখোঁচা দাড়ি,

দাঁত অবধি চলে গেছে গোঁফ!

খদ্দর পাঞ্জাবি, কাঁধে ঝুলানো ব্যাগ।

 

হাইকোর্টের মাজারে নির্ধারিত হোগলায় বসে গাঁজায় বুদ হয়ে পড়ে থাকা

শহরের কোন এক নতুন কবি।

নাকি মধ্যরাতে প্যাথেডিন নিয়ে রাস্তার মোড়ে পড়ে থাকা কোন উন্মাদ কবি।

তাকে দেখে ঘেউঘেউ করে নেড়িকুকুর।

নাকি বুক পকেটে একমুঠো শ্রেণিহীন সমাজ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে ফুটপাত দিয়ে

হেঁটে চলা কোন এক তরুণ কবি।

আসলে কবিরা দেখতে কেমন

কেমন তাদের চলন বলন!

নাকি চিলির পাবলো নেরুদার মতো ক্লিন শেভ আর

লেনিন মার্কা ক্যাপ মাথায় নিয়ে দীপ্ত পায়ে হাঁটা।

জার্মান কবি বের্টল্ট ব্রেখট মতো হাভানার বিখ্যাত 

চুরুট মুখে দিয়ে নতুন স্বপ্ন আঁটা।

:::::::


ক্যালেন্ডার

দয়াময় পোদ্দার

 

ছায়া নেমে পা ঝুলিয়ে বসেবট-পাকুড়ের ডালে,

সেই পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দু থেকে যত লেনদেন, সপ্তাহে

দুদিন হাট বসে।

জাহাজ বোঝাই করে চকিত খুশির ঝলক

দুই মেরু দেশে চলে যায়।

তারপরে বসন্তোৎসব শুরু হয় সেসব দেশে,

নাচাগনা, খানাপিনা, গমগমে জনপদ, তার ভিতরে

পাতা পতনের শব্দে আচমকা ফেরা : এই বুঝি তিনি এলেন

উতল হাওয়া!

সেসব অতীত দৃশ্যাবলীদেওয়ালে ক্যালেন্ডার

কেবিনে নিদ্রাহীন নাবিক, দুয়েকটা তারা,

জাহাজ ছেড়ে যাবে হুইসেল বাজিয়ে...

:::::::


ইশারা বিদ্ধ সত্য 

কৃষক মাহমুদ 

রাতের পরনে চাঁদের তোয়ালে

সঙ্গবদ্ধ হাওয়া

সূর্যকে শ্মশান করে

কাচের গ্লাসে করে রূপক বনসাই...

 

বীজের ভেতরেই বৃক্ষের পরিচয়।

ইশারা বিদ্ধ সত্য সকাল

অন্ধ আয়নায় ভেঙে পড়ছে 

চোখের গুড়ো।

:::::::


কত নদী শত নদী

নজরুল ইসলাম শান্তু

 

বাংলাদেশের নদীগুলোর চমৎকার সব নাম

নামের কারুকাজের ধারায় বইছে অবিরাম।

পদ্মা-মেঘনা-যমুনাটাই দেশের বড় নদী

সাতমোহনা, আড়িয়াল খাঁ, বইছে নিরবধি।

 

ইছামতি নদীর বুকে চলছে এখন খরা

ফারাক্কার-ঐ নিষ্ঠুরতায় নদ-নদী সব মরা!

কান্দে আমার তিস্তা নদী, কান্দে ব্রক্ষ্মপুত্র

আন্তর্জাতিক নদী আইনে মানছে না কেউ সূত্র!

 

মাঠ চৌঁচির, ঘাঁট চৌঁচির, ধানের জমি ফাঁটা

তিস্তা ব্যারেজ কেড়ে নিছে নদীর জোয়ার-ভাটা।

সন্ধা-মহানন্দা নদী মরতে শুরু করছে

নদীর বুকে চর দখলে কেউবা বসত গড়ছে।

 

বুড়িগঙ্গা-ধলেশ্বরী-শীতলক্ষার জল

এক সময়ে ছিল আহা কলকলে ছল-ছল।

তুরাগ-কুসাই-কালিগঙ্গা কিংবা নাফের সাজ

ধানসিঁড়ি ও পায়রা নদী দিশা হারায় আজ।

 

গোমতী এবং মধুমতি মরছে তিলে-তিলে

ঠকবাজেরা নদীগুলো খাচ্ছে গিলে-গিলে!

সুরমা-আত্রাই-কর্ণফুলীর নেই যেন হাঁকডাক

কীর্তিনাশা করতোয়া সাঙ্গু হয় নির্বাক!

 

রূপসা-ডাকাতিয়ার মাঝি কাঁদছে নদীর পারে        

সাঁতরে ফেরা মায়া নদী কান্দে জারে জারে।

কীর্তনখোলা- নবগঙ্গা-কপোতাক্ষ-গড়াই

ওদের নিয়ে এদেশবাসীর ছিল কতো বড়াই।

 

আভাতিয়া সুচিত্রাও সঙ্খ-ভৈরবীতে

আন্দারমানিক পানগুচি বয়, ঢেউয়ের বিপরীতে।

তিতাস-মাতামুহুরী ও অগ্নিমুখোর বাণে

নাচতো দুলে কুশিয়ারা হঠাৎ ঝড় তুফানে!

 

বিষখালী-ও বলেশ্বরে ইলিশ ধরার মাঝে

জোয়ার ভাটার রূপটা দেখি এক অপরূপ সাজে। 

এই নদীরাই মৎস্য নদী সম্পদে ভরপুর...

এই নদীরা বিলীন হলে মুছবে প্রাণের সুর। 

 

প্রযুক্তিতে গভীরতায় চাই যে খনন নদী

মাছে ভরা নদীর দেখা চাই সবে অবধি।

ময়লা আবর্জনা ফেলা নদীতে নয় আর

দেশ-জনতা সবার কাছে বলছিরে বার-বার ।

 

নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে, বাঁচবে জনগণ

নদী রক্ষার আন্দোলনে দাও সবে আজ মন ।

নইলে সোনার বাংলা হবে মরুভূমির দেশ

নদীমাতৃক বাংলাদেশের সুখ হবে নিঃশেষ।

 

আর্তনাদে কাঁদছে মাঝি, কাঁদছে জেলে গঙ্গায়

পানিবিহীন হয়েই এদেশ পড়বে মহা-মঙ্গায়।

বাংলাদেশের নদী নিয়ে আছে অনেক গান

নদীর সাথে মিশে আছে জন্মভূমির প্রাণ।

:::::::


ফুলকে চেনা

সুপান্থ মিজান 

 

হাতের কাছে গোলাপ-টগর

যায় না তাঁকে চেনা?

চেনার আশায় ফুলকাননে

খুঁজি হাসনাহেনা।

 

হাসনাহেনায় ব্যর্থ হয়ে

যেই পেয়েছি বকুল

চেনবো বলে গোলচক্করে

হারিয়েছি দু’কূল।

 

গন্ধরাজের গন্ধে মাতাল

পাই না খুঁজে খেঁই,

শিউলি তলায় হেঁটে দেখি

কেউ পাশে আর নেই।

 

ফুল চিনিতে আনমনা মন

চলছে যখন একা

আঁধার ক্ষণে মালীর সনে

হঠাৎ হলো দেখা।

 

হাসি দিয়ে জানতে চাইলো

যাচ্ছ কোথায় খোকা?

কথা শুনে বলল মালী

তুই যে হদ্দ বোকা।।

 

যা চিনেনি নন্দিতগণ

কেমন করে চিনবি

চিনতে গেলে এই জাহানে

উল্টো কাপড় ফিনবি।।

:::::::


শূন্যতা

খান নজরুল ইসলাম 

 

আকাশটা ছুঁতে চেয়েছিলাম 

মেঘের পর্দা ভেদ করে হয়ে ওঠেনি 

চোখের পর্দা সরিয়ে নির্লজ্জ হলেই

আকাশের আত্মচিৎকারে বজ্রপাত ঘটে! 

আমি আবার ফিরে আসি আপন আস্তানায়!

 

দেহের সমুদ্রে রাখা গুপ্তধন 

সবটুকু লুটেপুটে নিমিষেই শেষ 

প্রতিঘাতে অরক্ষিত আপন আলয়

কেবলই রক্তক্ষরণ বিষাদের ঠোঁটে 

বারবার দ্রোহের কাঁপন বিশাল শূন্যতায়!!

 

তোমার সমুদ্রচোখে মুক্ত ছিল 

জল খসেখসে সে পাথর মূল্যহীন

তোমাকে ছুঁতে গেলে বুঝি তার দাম

জানি সব’ই এ গৃহে কেন অঘটন ঘটে

বিলাসী জীবন কেন বিষাদের অশ্রুধারায়!

:::::::


প্রেম 

সুলতান মাহমুদ

 

যে প্রেমে পড়ল

সে ভাবল প্রেম মানে কিছু অনুভূতি

কিছু হরমোনের বিচ্ছিন্ন নড়াচড়া

মগজের কোনে চিনচিন ব্যথা

হৃদয়ের অলিন্দে শত ফুল ফোটা।

 

সে জানল প্রেম এক ভরা বর্ষা

এক বর্ষণমুখর বিকেল

বারান্দায় বসে আনমনে এক কাপ চা

একটা কবিতার বই, একটা হলুদ খাম

 

যে প্রেমে পড়ল

তার চোখে সবটাই আলো

নিকষ অন্ধকার, কুহুকের মায়াজাল

প্রতারণার ছায়া, সবটাই জাগায় মায়া

 

সে জানল প্রেম এক প্লেট আবেগ

প্লেটের পান্তাকেও মনে হয় কাচ্চি বিরিয়ানি 

সে শূন্যতায় পূর্ণতার জাল বুনে,  মৃদু হাসে

কল্পনার রথে চড়ে পাড়ি দেয় সপ্তসিন্ধু নদ!

 

যে প্রেমে পড়ল

তারে যে বাঁধল না অসীম ক্ষমায়

তার শত ত্রুটি এড়ালো না নীরব উপেক্ষায়

সে জানুক সে ভুল পাত্রে জানিয়েছে প্রণতি।

 

প্রেম আর কিছু নয়

শুধুই ক্ষমা, অবিরাম ক্ষমা।

:::::::


নাটাই ঘুড়ি

ইব্রাহিম খলিল

 

মাঞ্জা বিহীন সুতোর নাটাই

হাতে ধরে

সেই ছেলেটা নতুন করে

স্বপ্ন গড়ে।

 

ছোট্ট মাথায় ভাবনা যে তার

খাচ্ছে পাক

সুতোকাটা সেই ঘুড়িটা

যাচ্ছে যাক।

 

নতুন করে মাঞ্জা দিয়ে

সুতোর গায়

দেখবে খোকা কেমনে ঘুড়ি

কাটা যায়?

 

আসছে যতোই কালবৈশাখী

বৃষ্টি ঝড়

পিঁপড়াগুলো বারেবারে

বাঁধছে ঘর।

 

তাই না দেখে খোকার এলো

সাহস বুকে

নতুন ঘুড়ি মাঞ্জা দিয়ে

উড়ায় সুখে।

:::::::


ভ্রম

সুদর্শন বাছার

 

- চলো ওপারে-

- না না মরতে বলছি না।

ওই যে দূরে নীল গাছ-পালা-

আর ছোটো ছোটো ঘর, ওপারে?

- ওগুলোকে নীল বলছো?

- ওগুলো আসলে সবুজ;

- আর ঘরগুলোকে ছোটো?

- আসলে ওগুলো ছোটো নয়!

- তোমার আকারের মানুষরাই ওঘরে থাকে।

 

তাহলে চলো ওই সবুজে বসি।

- ওগুলো সবুজ বলছে কেনো?

- ওগুলো সবুজ নয়!

- ওগুলো তো হলুদ আর নীলের গাঢ় প্রেম!

 

ওই যে দূরের ছবিটি দেখছো-

- ওটাকে ছবি বলছো কেনো?

- আহা, কাছে গিয়ে দেখো;

-  আসলে ওটা ছবি নয়!

- ওটা উলটাপালটা হরেক রঙের মিলন!

 

এই যে এবড়োখেবড়ো এগুলো দেখছো না?

- কী আশ্চর্য!

- এগুলো এবড়োখেবড়ো কেনো বলছো?

- এটা আমি এঁকেছি,

- এটা তো তোমার ছবি!

- একটু দূরে গিয়ে দ্যাখো!

 

- এ কী, তুমি বিরক্ত হচ্ছো!

- এ কী, তুমি ঘামছো?

- এ কী, তুমি কাঁদছো?

- তোমাকে বলেছিলাম-

- এতো কাছে এসো না, আমাকে বুঝবে না!

- অতো দূরে যেও না, আমাকে চিনবে না!

:::::::


ঘুম ভাঙানি গান

ডিএম শফিকুল ইসলাম

 

ঘুম ভাঙানি পাখি ডাকে

ওঠ যাদু ময়না

গলায় মতির মালা দেব

দেব সোনার গয়না।

 

শিষ দিয়ে কয় ভোরের দোয়েল

খোলো তোমার আঁখি

উঠছি আমি সবার আগে

বাগে কুসুম বাগে।

 

ঘুম ভাঙানি পাখি আমি

বলি ডাকি ডাকি

সকাল হলে উটতে হবে

মনে যেন রাখি।

:::::::


যাতায়াত

রুদ্রসাগর

 

কত, কত দিন; দিনান্তের পথে হেঁটে গেলে তুমি

আগন্তুকের মতো তোমার রেশমি হেলে পড়া চুলগুলো

শরতের আভাস নিয়ে এলো সন্ধের আলোয়

আমি যেন ঘুমিয়ে উঠে সদ্য চোখ খুলে দেখছিলাম

আর আমার চোখজুড়ে তুমি আর ফুল; প্রজাপতি

অনন্য প্রদীপের মত জ্বলজ্বল করছিল গোধূলির রং

 

তুমি হাসতেই ঝড়ে পড়ছিল শিশির

আমি শুধু পিপাসার্ত ঠোঁট দিয়ে স্পর্শ করছিলাম

তোমার শুভ্র সোনালি ত্বক, মসৃনতা, সুগন্ধ চিবুক

 

অথচ দেখ, আজ আর প্রতীক্ষার শব্দ নেই

বিভ্রমের পায়চারি থামিয়ে থমকে গেছি একা পথে

আকাশের মন্থর মেঘ ভেঙে কবে সেই উড়েছিলে

তারপর শুধু গাংচিল আর শঙ্খচিল খুঁজে খুঁজে

আমি ক্লান্ত আর অন্ধ আর রোগভোগ শরীরে ন্যুব্জ

 

বাতাসে বাতাসে কুর্চিফুলের বার্তা আসে

আমি আর হাত বাড়িয়ে ছুঁতে পারি না... কষ্ট লাগে!

:::::::


পরছি না আর ফাঁদে 

নাজমুল হক

 

পরছি না আর ফাঁদে 

তোমার জাদুরটোনায় 

কাটছে ভালোই সময় 

আপন ছাঁদের কোনায়! 

 

ডাকছি না আর কাছে 

দূর থেকেই সব সরস 

ঠুনকো লাগে ভীষণ 

বাড়ির কাছের আরশ!

 

কমছে না আর লোভ 

পেটটা যতোই ভরা 

উপচে পরছে কারোর 

কারোর পেটে খরা! 

 

চলছে না আর সময় 

থামলো কেন ঘড়ি

ঘুরছে মাথায় শাসন 

কার ইশারার ছড়ি?

 

দেখছে না আর চোখ 

অন্ধ সাজাই ভালো 

সুখের নেশায় কেন 

নিঃস্ব হতে বলো? 

 

লাগছে না আর ভালো 

স্বার্থ যেথায় আগে 

সত্যি ভীষণ চড়া 

কাঁপছি বেজায় রাগে! 

 

ভাবছে না আর মগজ 

বাঁচার আশায় ক্ষত 

ক্ষণিক জীবন সাঁজাও 

নিয়ে বন্ধু পাবে যত!

:::::::


গাছে-গাছে ঢং 

ফকির শাহিন শাহ্ 

 

ফাগুন আগুন, গুন-গুনাগুন

ফুল পাখিদের বান,

পাতা ঝরে, পাতা গজে

কুহু-কুহু গান।

 

কুহু-কুহু গান কোকিলের

শিমুল-পলাশ বনে,

বাসন্তী রং লাগলো আবার

ফাগুন আগমনে।

 

লাগলো আগুন, লাগলো রং

লাগলো ডালে-মূলে,

আয়রে খোকা খুকি তোরা

ফুল পাখির ইশকুলে।

 

ফুল পাখির ইশকুলে আয়

আয়রে খোকা খুকি,

ওই দেখা যায় ডালে-ডালে

ফুলের উঁকিঝুঁকি।

 

ফুলের উঁকিঝুঁকি ওই–

রেণু হাওয়ায় ভাসে,

নতুন পাতায় নতুন ফুলে

ভুবন কেমন হাসে।

 

ভুবন হাসে, ভুবন গায়

গাছে-গাছে ঢং,

শিমুল বনে বসে কোকিল

গায়ে মাখে রং।

:::::::


বসন্ত

বিএম আরিফ  

 

বসন্ত মানে কোকিলের সুর 

কৃষ্ণচূড়ার রাজপথ

শিমুল-পলাশের সৌন্দর্যের ডেউ

আবির-রঙে ডাক দিয়ে যায় কেউ।

 

বসন্ত মানে প্রাণের অভিষেক 

সংগীতের কলতান কানে কানে

বিভেদ মোছার স্বপ্ন অভিযান 

নতুন করে জেগে ওঠার দিন।

 

বসন্ত মানে ভোমরার দল বেধে চলা

কাননে কাননে পুষ্প ফোটা

বৃক্ষ নতুন পত্র পল্লবে সাজা

প্রকৃতিতে সবকিছু অপরূপ লাগা।

 

বসন্ত মানে আম্রের 

নব মঞ্জরি মুকুল

মোহন বাসির সুর

কোকিলের কুহু কুহু। 

 

এমন-ও বসন্তে 

আমাদের জীবনের পাতা 

সাজবে কি 

নতুন বর্ণতে?

:::::::


জীবনের বাস্তবতা

শাহীন হোসেন

 

সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দিয়ে

অর্জন করা মেয়েটি নিয়েও

সংসার জীবনে অনেক সময় ঝামেলা হয়

কিছু কিছু সময় এত আপনজনকেও বিচ্ছেদ করে দিতে হয়।

 

বাবা মায়ের আদর মমতা ভালোবাসা

সম্মান ক্ষুণ্ণ করে পালিয়ে যাওয়া মেয়ে বা ছেলেটাও

যখন একা থাকে তখন অনেক সময় চিন্তা করে

জীবনে কত বড়ো ভুলই না করেছি।

 

এতো আয়োজন করে বিয়ে হওয়ার পরও

সংসার জীবনে অনেক সময় পড়েন বিপাকে

ডিভোর্স দেওয়ার জন্য পাগল হয়ে যায় দুজনেই

তখন ভাবে ডিভোর্সই জীবনের সবচেয়ে পরমপ্রাপ্তি।

 

রাতের গভীরে কেঁদে কেঁদে বালিশ ভেজানো মেয়েটিও

একটা সময় বলে,

আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য করে

ওর সাথে বিয়ে হলে কী হতো? আজ ও দিনমজুর

আমি আলিশান ফ্লাটে ঘুমাই, আমার জামাই লন্ডন থাকে।

 

আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন দেখা মানুষটাও একদিন হারিয়ে যায়

এই আকাশের নিচেই,

কারো জন্য মরতে মরতে সেই মানুষটাও বেঁচে থাকে

মহা সুখে, মহা আনন্দে জীবন যাপনও করে।

 

এর নামই বাস্তবতা, এর নামই জীবন

যাহা পেয়েছি তাতে দুঃখ ভরা মন

যাহা পাইনি তাতে আমার হতো

সুখের জীবন যাপন।

:::::::


দারুণ শীতে

হোসাইন মুহঃ দেলোয়ার

 

দারুণ শীতে টোকাইরা সব

ছালা গায়ে চেপে,

অতি কষ্টে থাকে তারা

শীতে ওঠে কেঁপে।

 

দিনের বেলা অনাহারে

রাতে কাঁপে শীতে,

তাদের কথা কেউ ভাবে না

এই না পৃথিবীতে।

   

টোকাইদের নাম বেঁচে কেউ

বিদেশের টাকায়,

খুব আরামে বাস করে

অনেকেই ঢাকায়।

 

দারুণ শীতে কষ্ট করে

টোকাইরা রোজ,

কেউ জিগায় না তাদের এখন

নেয় না যে খোঁজ।

:::::::


বসন্তের আগমন 

জান্নাতুল ফেরদৌস মুক্তা 

 

বসন্তের আগমনে 

ফুল ফুটেছে গাছে, 

ঝরা পাতার গুঞ্জনেতে 

পাখিরা সব নাচে। 

 

বসন্তের আগমনে 

কোকিল গাইছে গান, 

শূন্য সকল বন-বনানী 

ফিরে পেয়েছে প্রাণ। 

 

বসন্তের আগমনে 

ভ্রমর করছে খেলা, 

জমে উঠেছে ঢাকা শহর 

চলছে বইয়ের মেলা। 

 

বসন্তের আগমনে 

ফুটছে আমের মুকুল,

মৌমাছির ঐ গুনগুনেতে 

হচ্ছে প্রেমিক ব্যাকুল। 

 

বসন্তের আগমনে 

গাছে নতুন পাতা,

নানান রঙ্গের স্নিগ্ধ মায়ায়

সেজেছে কবিতার খাতা। 

:::::::


গরীবের দিনকাল

মানিক লাল সাধু

 

আমরা অনেক গরীব তাই মোটা চাল খাই

খোলা আকাশের নিচে বাস ঘরের চালা নাই

অনেক শখ আছে মোদের মেটাতে সাধ্য নাই

প্রতিনিয়ত নাই আর নাই চলছে এমনটাই।

 

শাড়ি থাকে সেলাই করা জামার কলার ফাটা

আলু খাই বেশি বেশি সাথে লালচে আটা

ইলিশ মাছ কিনি না তো মাছে অনেক কাঁটা!

ধুঁকে ধুঁকে চলছে জীবন আছে জোয়ার ভাটা।

 

বাদল দিনে জলে ভাসি পায়ের পাতা ভিজে 

ঘরের মাঝে জল প্রবাহে আহা! মজা কি যে!

সন্তানেরা খিদের জ্বালায় বুক ফাটিয়ে কাঁদে 

হাজার রকম কষ্টের জীবন সুখেরা বাঁধ সাধে।

:::::::


অলীক আড়ম্বর 

মু মু হাসান 

 

তুমি হারবে না

বয়স তোমাকে হারিয়ে দিবে, 

তুমি থামবে না

বার্ধক্য তোমাকে থামিয়ে দিবে, 

তুমি মানছো না 

বাস্তবতা তোমাকে মেনে নিতে হবে। 

সময় ও স্রোত 

কারো জন্য অপেক্ষা করে না

প্রকৃতির নিয়ম 

চাইলেও কেউ এড়াতে পারে না,

জীবন ঢেউয়ের মতো

শীর্ষে উঠতে উঠতে ভেঙ্গে যায় 

ক্ষমতা বেলুনের মতো

বিশাল হতে হতে ফেঁটে যায় 

পাথরেরও আছে ক্ষয়

জগতে শক্তিমত্তা চিরস্থায়ী নয়

অহংকার চূর্ণ হয় 

কালের প্লাবনে দাম্ভিকতা ভেসে যায়।

:::::::


হয় না যেন অপমান

আবুল কালাম মৃধা

 

লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে

অর্জিত এই দেশটা হায়!

পাইনি কারো দয়ার দানে

কিংবা কারো করুণায়।

মান দিয়েছে মাতা-ভগ্নি

প্রাণ দিয়েছে আমার ভাই

পুত্রহারা লক্ষ মায়ের

ত্যাগের দামে দেশটা পাই।

তবু কেন হিংসা বিভেদ

হানাহানি চলছে আজ

পায় না খেতে অনাহারি

কোথায় রাখি দুঃখ লাজ?

দুর্নীতিবাজ মানুষগুলোর

বাড়ছে এখন অনেক বাড়

তাদের হাতের পুতুল হয়ে

আমরা কেন মানছি হার?

রুখে দিয়ে দুর্নীতিবাজ

করতে দেশের উন্নয়ন

হাতে হাতে হাত মিলিয়ে

আমরা সবাই করবো পণ।

রাখতে ধরে বিজয়টাকে

লাগলে আরো দিব প্রাণ

কোনোভাবেই দেশমাতৃকার

হয় না যেন অপমান।

:::::::


বসন্তের গান 

আসাদুল্লাহ কাওসার 

 

চলো না বসন্তের কোকিল হই

ডানা মেলে হারাবো অচিনপুরে,

ইট পাথরের চিলেকোঠা ডিঙিয়ে 

দূরে.... আরো অনেক দূরে....

 

যেখানে থাকবে সবুজ আর সবুজ 

সবুজে ঘেরা স্নিগ্ধ প্রকৃতি, 

থাকবে না শুধু কৃষ্ণ অতীত 

আর থাকবে না স্মৃতি। 

 

থাকবে না উদরের টান 

আর থাকবে না পিপাসা, 

থাকবে না অপূর্ণ স্বপ্ন 

আর থাকবে না কোন আশা।

 

থাকবে না অন্যকে ঠকিয়ে 

জিতে যাওয়ার প্রবণতা, 

থাকবে না-তো টিকে থাকার 

নিষ্ঠুরতম প্রতিযোগিতা। 

 

থাকবে না ঝগড়া বিবাদ 

আর থাকবে না অভিমান, 

থাকবে শুধু সবার মুখে  

বসন্তের গান।

======

 



إرسال تعليق (0)
أحدث أقدم