ছড়ার রূপ ও স্বরূপ :: ঋজু রেজওয়ান

ছড়ার রূপ ও স্বরূপ

ঋজু রেজওয়ান

ছবি : ইন্টারনেট

আমরা কবিতা বলতে যা বুঝি তার তিনটি রূপ- ছড়া, পদ্য ও কবিতা। ‘ছড়া’- পদ্যের একটি প্রাচীন পদ, পদ্যের গোত্রভূক্ত হয়েও স্ব-মহিমায় উজ্জ্বল। বাংলাসাহিত্যের আদি নিদর্শন- চর্যাগীতির প্রথম পদটি ছড়ার, এই পদটি বাংলাসাহিত্যের আদিছড়া বললেও ভুল হবে না।

 

(রাগ পটমঞ্জরী লুইপাদানাং)

কাআ তরুবর পাঞ্চবি ডাল।

চঞ্চল চীএ পইঠো কাল।।

দিঢ় করিঅ মহাসুহ পরিমাণ।

লুই ভণই গুরু পুচ্ছঅ জাণ।।

সঅল [সমা] হিঅ কাহি করিঅই।

সুখদুখেতেঁ নিচিত মরিআই।।

এড়িএউ ছান্দক বান্ধ করণক পাটের আস।

সুন্ন পাখ ভিতি লাহু রে পাস।।

ভণই লুই আমহে সাণে দিঠা।

ধমণ চশণ বেণি পান্ডি বইঠা।

(পদ: ১)– চর্যাচর্য বিনিশ্চয়। সংগ্রহে- হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর চর্য্যার্চয্যবিনিশ্চয়’

 

লোকসাহিত্যের অপরাপর শাখাগুলো হলো- ১. ছড়া. ২. ধাঁধা বা হেঁয়ালি ৩. লোকগীতি ৪. লোককথা ৫. প্রবচন ৬. লোক সংগীত ৭. লোকগীতি ৮. পুরাকাহিনী বা মিথ ইত্যাদি। লোকসাহিত্যের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন হলো ‘ছড়া’। ছড়ার রয়েছে প্রায় দেড়হাজার বছরের সুদীর্ঘ ইতিহাস। সাহিত্যের ক্রমবিবর্তনের ইতিহাসে ছড়ার বিকাশ ও উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে। আদিতে সাহিত্য রচিত হতো মুখে মুখে এবং ছড়াই ছিল সাহিত্যের প্রথম শাখা বা সৃষ্টি। সাহিত্যকে লেখ্যরূপে পাওয়ার পূর্বে মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করতো ছড়ার মাধ্যমে। লোকসমাজে ছড়াই ছিল ভাবপ্রকাশের প্রধান মাধ্যম, যা লৌকিক ছড়া নামে পরিচিত।

 

মাছ আনিলা ছয় গন্ডা

চিলে নিল দুই গন্ডা ।

বাকি রইল ষোলো

তাহা ধুতে আটটা জলে পালাইল ।

তবে থাকিল আট

দুইটায় কিনিলাম দুই আটি কাট ।

তবে থাকিল ছয়

প্রতিবেশীকে চারিটা দিতে হয়

তবে থাকিল দুই

তার মধ্যে একটা চাখিয়া দেখিলাম মুই

তবে থাকিল এক

ঐ পাত পানে চাহিয়া দেখ ।

এখন হইস যদি মানুষের পো

তবে কাঁটাখান খাইয়া মাছখান থো ।

আমি যেই মেয়ে

তেই হিসাব দিলাম কয়ে ।

লৌকিক ছড়া, সংগ্রহ- উইলিয়াম কেরি।

 

যোগীন্দ্রনাথ সরকার- ই সর্বপ্রথম লৌকিক ছড়াকে ‘খুকুমণির ছড়া’ নামে গ্রন্থভুক্ত করেন এবং গ্রন্থটির ভূমিকায় সর্বপ্রথম রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদী ছড়াকে সাহিত্যের একটি অন্যতম শাখা হিসেবে স্বীকৃতি দেন।

 

আতা গাছে তোতা পাখি

ডালিম গাছে মউ,

কথা কও না কেন বউ ?

কথা কব কী ছলে,

কথা কইতে গা জ্বলে !

খুকুমণির ছড়া, যোগীন্দ্রনাথ সরকার

 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার সম্পাদিত কাব্যগ্রন্থে সুকুমার রায়ের ছড়া সংকলিত করে ছড়ার গ্রহণযোগ্যতাকে আরও মজবুত করেন।

 

চুপ কর্, শোন্ শোন্, বেয়াকুল হোস্নে

ঠেকে গেছি বাপ্রে কি ভয়ানক প্রশ্নে!

ভেবে ভেবে লিখে লিখে বসে বসে দাঁড়েতে

ঝিম্ঝিম্ টন্টন্ ব্যথা করে হাড়েতে।

একছিলো দাঁড়ি মাঝি–দাড়ি তা মস্ত ,

দাড়ি দিয়ে দাঁড়ি তার দাঁড়ে খালি ঘষ্ত।

সেই দাঁড়ে একদিন দাঁড়কাক দাঁড়াল,

কাঁকড়ার দাঁড়া দিয়ে দাঁড়ি তাকে তাড়াল।

কাক বলে রেগে মগে “বাড়াবাড়ি ঐ ত!

না দাঁড়াই দাঁড়ে তবু দাঁড়কাক হই ত?

ভারি তোর দাঁড়িগিরি, শোন্ বলি তবে রে–

দাঁড় বিনা তুই ব্যাটা দাঁড়ি হস্ কবে রে?

পাখা হলে ‘পাখি’ হয় ব্যাকরণ বিশেষে–

কাঁকড়ার ‘দাঁড়া’ আছে, দাঁড়ি নয় কিসে সে?

দ্বারে বসে দারোয়ান, তা যদি ‘দ্বারী’ কয় ,

দাঁড়ে-বসা যত পাখি সব তবে দাঁড়ি হয়!

দূর দূর! ছাই দাঁড়ি! দাড়ি নিয়ে পাড়ি দে!”

দাঁড়ি বলে,” বাস্ বাস্! ঐখেনে দাঁড়ি দে।”

দাঁড়ের কবিতা, সুকুমার রায়।

 

ছড়া প্রসঙ্গে কবিগুরু বলেছেন, ‘সুদূর কাল থেকে আজ পর্যন্ত এই কাব্য (ছড়া) যারা আউড়িয়েছে এবং যারা শুনেছে তারা অর্থেও অতীত রস পেয়েছে। ছন্দতে ছবিতে মিলে একটা মোহ এনেছে তাদের মধ্যে। সেইজন্য অনেক নামজাদা কবিতার চেয়ে এর (ছড়া) আয়ু বেড়ে চলেছে।’ প্রাচীন যুগে ‘ছড়া’ সাহিত্যের মর্যাদা না পেলেও বর্তমানে সে তার প্রাপ্য সম্মান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

 

ছেঁড়া মেঘের আলো পড়ে

দেউলচূড়ার ত্রিশূলে;

কলুবুড়ি শাকসবজি

তুলেছে পাঁচমিশুলে।

চাষী খেতের সীমানা দেয়

উঁচু ক ‘ রে আল তুলে;

নদীতে জল কানায় কানায়,

ডিঙি চলে পাল তুলে।

কোমর-ঘেরা আঁচলখানা,

হাতে পানের কৌটা

ঘোষপাড়াতে হনহনিয়ে

চলে নাপিতবউটা।

গোকুল ছোঁড়া গুঁড়ি আঁকড়ে

ওঠে গাছের উপুরি,

পেড়ে আনে থোলো থোলো

কাঁচা কাঁচা সুপুরি।

বর্ষাজলের ঢল নেমেছে,

ছাপিয়ে গেল বাঁধখানা,

পাড়ির কাছে ডুবো ডিঙি

যাচ্ছে দেখা আধখানা।

লখা চলে ছাতা মাথায়,

গৌরী-কনের বর

ড্যাঙ ড্যাঙাড্যাঙ বাদ্যি বাজে,

চড়কডাঙায় ঘর।

ছেঁড়া মেঘের আলো পড়ে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

 

অন্নদাশঙ্কর রায় ছড়া সম্পর্কে বলছেন- ‘ছড়া যদি কৃত্রিম হয় তবে তা ছড়াই নয়, তা হালকা চালের পদ্য। তাতে বাহাদুরি থাকতে পারে, কারিগরি থাকতে পারে, কিন্তু তা আবহমানকাল প্রচলিত খাঁটি দেশজ ছড়ার সঙ্গে মিশ খায় না। মিশ খাওয়ানোটাই আমার লক্ষ্য। যদি লক্ষ্যভেদ করতে পারি তবেই আমার ছড়া মিশ খাবে, নয়তো নয়।’

 

তেলের শিশি ভাঙল বলে,

খুকুর পরে রাগ করো?

তোমরা যেসব বুড়ো খোকা,

ভারত ভেঙে ভাগ করো?

তার বেলা

ভাঙছো প্রদেশ ভাঙছো জেলা

জমিজমা ঘরবাড়ি

পাটের আড়ত, ধানের গোলা

কারখানা আর রেলগাড়ি-

তার বেলা?

খোকাখুকু, অন্নদাশঙ্কর রায়।

 

ড. আশুতোষ ভট্টাচার্য তার ‘লোক সাহিত্য’ গ্রন্থে ছড়াকে লৌকিক ছড়া, সাহিত্যিক ছড়া ও আধুনিক ছড়াএই তিনটি ভাগে বিভক্ত করেছেন। বাংলাদেশের ছড়া সাহিত্যে এই তিন শ্রেণীর ছড়াই বর্তমান।

 

১) লৌকিক ছড়ায় রচয়িতার নাম নেই।

২) সাহিত্যিক ছড়ার উপশ্রেণী শিশুতোষ ছড়া।

৩) আধুনিক ছড়া কালের কৌশলকে মেজাজ ও রস বহন করে।

তবে আধুনিক ছড়া সম্পর্কে প্রশ্ন উঠেছে, বলা হয়সমাজ সচেতন বা সমাজ বাস্তবতাকে নিয়ে রচিত ছড়াই আধুনিক ছড়া।

 

বর্তমানে ছড়ার প্রকারভেদ হিসেবে উল্লেখ করা যায়: শিশুতোষ ছড়া, খেলার ছড়া, সামাজিক ছড়া, ঐতিহাসিক ছড়া, আচার অনুষ্ঠানমূলক ছড়া, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপাত্মক ছড়া, নীতিশিক্ষামূলক ছড়া, রাজনৈতিক ছড়া এবং ছড়ার ছন্দাশ্রিত কিশোর কবিতা প্রভৃতি।

 

ক) শব্দ ও মিলের অপূর্ব নিদর্শন- অন্তমিলে দুই মাত্রা এবং বিষয় বর্ণনায় যুত্সই শব্দের প্রয়োগ:

ক্ষান্তবুড়ির দিদি-শাশুড়ির পাঁচ বোন থাকে কালনায়,

শাড়িগুলো তারা উনুনে বিছায়, হাঁড়িগুলো রাখে আল্নায়।

কোনো দোষ পাছে ধরে নিন্দুকে,

নিজে থাকে তারা লোহা সিন্দুকে,

টাকাকড়িগুলো হাওয়া খাবে বলে রেখে দেয় খোলা জাল্নায়

নুন দিয়ে তারা ছাঁচিপান সাজে, চুন দেয় তারা ডাল্নায়।

খাপছাড়া, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

 

(খ) ছন্দ-মিলের দক্ষতার প্রয়োগ:

দেখিনু সেদিন রেলে,

কুলি বলে এক বাবু সা’ব তারে ঠেলে দিলে নিচে ফেলে

চোখ ফেটে এল জল,

এমনি করে কি জগত্ জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল!

কুলি মজুর, কাজী নজরুল ইসলাম।

 

(গ) ছন্দ মিলের অপূর্ব তাল প্রয়োগ:

খাই খাই করো কেন? এসো বসো আহারে

খাওয়াব আজব খাওয়া, ভোজ কয় যাহারে।

যত খুশি খাওয়া লেখে বাঙালির ভাষাতে

জড়ো করে আনি সবথাকো সেই আশাতে।

খাই খাই, সুকুমার রায়।

 

(ঘ) উপযুক্ত শব্দের ব্যবহার ও ছন্দের গাঁথুনিতে বর্ণনা হয় হূদয়গ্রাহী অপূর্ব দৃষ্টান্ত:

রাত থম্ থম্ স্তব্ধ নিঝুম, ঘন ঘোর আঁধিয়ার

নিঃশ্বাস ফেলি তাও শোনা যায়, নাই কোথা সাড়া কার।

রুগ্ন ছেলের শিয়রে বসিয়া একেলা জাগিছে মাতা,

করুণ চাহনি ঘুম্ ঘুম্ যেন ঢুলিছে চোখের পাতা।

পল্লী জননী, জসিম উদ্দীন।

 

(ঙ) সঠিক শব্দের ছন্দ মিলের পাশাপাশি বিষয়ের প্রতি অটুট ভাবনার ব্যবহারঃ

অসময়ে মেহমান

ঘরে ঢুকে বসে যান

বোঝালাম ঝামেলার

যতগুলো দিক আছে

তিনি হেসে বললেন

ঠিক আছে ঠিক আছে।

রেসনের পচা চাল

টলটলে বাসি ডাল

থালাটাও ভাঙা-চোরা

বাটিটাও লিক আছে

খেতে বসে জানালেন

ঠিক আছে ঠিক আছে।

ঠিক আছে, সুকুমার বড়ুয়া।

 

(চ) সঠিক বিষয়ে ছন্দ-মিলের অর্পূব দ্যোতনা এবং শব্দের সঠিক কারুকাজ:

গোলাম রে তোর হবে ফাঁসি

সোনার বাংলা ভালোবাসি

যারা হাত মিলিয়েছে ঘাতকের সঙ্গে

তাদেরও বিচার হবে জানি এই বঙ্গে।

শাহবাগের ছড়া, লুত্ফর রহমান রিটন।

 

প্রাচীনকাল থেকে ছড়াকে শিশু সাহিত্য হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। ছড়ার উদ্দেশ্য হিসেবে বলা যায় শিশুদের সহজ সরল মনের আনন্দ, জ্ঞানবৃদ্ধি, নীতিশিক্ষা ইত্যাদি।

এ কালের সাহিত্য গবেষকরা জোর গলায় বলে থাকেনছড়া কাস্মিনকালেও ছেলেভোলানো বা শিশুতোষ ছিল না। এমনকি শিশুদের জন্য কখনও সৃষ্টি হয়নি। তবে পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে শিশুদের কাছে। আর যেহেতু ছড়া মুখে কাটার বিষয়, সেহেতু ছন্দ-মিলের বিষয়টি শিশুদের কাছে বেশি পছন্দনীয়। তাই বলে চর্যাগীতিকার প্রথম পদটি কি ছোটদের জন্য রচিত? কিংবা বর্গী-তাড়ানো ছড়া ‘ছেলে ঘুমালো, পাড়া জুড়ালো’ ছড়াটি বর্গীর ভয়ের কথা বলা হলেও এটি ঐতিহাসিক বিষয়কে নিয়ে কোনো এক অজানা ছড়াকার ছড়া কেটেছিলেন। এই ছড়াটি টিকে আছে আমাদের সাহিত্যের ইতিহাসে এবং মানুষের মুখে মুখে। কিন্তু কালের বিবর্তনে ছড়া আর শিশুদের মনোরঞ্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি, সকল বয়সী মানুষের চিন্তা চেতনা আনন্দ বেদনার প্রতিচ্ছবি ছড়ায় বর্তমানে উদ্ভাসিত।

ছড়া সাধারণত হাস্য- রসাত্মক / শিক্ষামূলক / ব্যঙ্গার্থক হয়। ছড়া মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত ঝংকারময় একটি পদ্য। এটি সাধারণতঃ স্বরবৃত্ত ছন্দে রচিত। ছড়ার প্রধান দাবী ধ্বনিময়তা ও সুরঝংকার, অর্থময়তা নয়। ছড়ায় ছন্দ-মিলের অর্পূব দ্যোতনা এবং শব্দের সঠিক প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়। শুধু বিষয়ই নয়, শব্দ-ছন্দের কারুকাজ প্রতিটি পঙিক্ততে পঙিক্ততে গাঁথা থাকে।

 

বুদ্ধদেব বসু বলেছিলেন, ‘আধুনিক কবির হাতে ছড়া বের হতে পারে শুধু এই শর্তে যে, তিনি বক্তব্য কিছু দেবেন, অথচ সেটুকুর বেশি দেবেন না যেটুকু এই হালকা ছোট চটুল শরীরে ধরে যায়। একেবারে সারাংশ কিছু না থাকলে তা নেহাতই ছন্দের টুংটাং হয়ে পড়ে, মাত্রা একটু বেশি হলেও আর ছড়া থাকে না।’

ছড়াকার আবদুর হাসিব বলেন, ‘ছন্দ আর অন্ত্যমিলের প্রতি যত্নশীল হয়ে হালকা চালে সহজ শব্দের সমন্বয় সাধন করে বিষয়কে প্রকাশ করবার জন্যে যে পদ বা পদ সমষ্টির সৃষ্টি করা হয় তাকে ছড়া বলে, ব্যক্তিগতভাবে এ সংজ্ঞাটিকে আমার পছন্দ। মাত্রাবৃত্তেও অনেক ছড়া দেখতে পাওয়া যায়।

 

“মৌমাছি, মৌমাছি,

কোথা যাও নাচি’ নাচি’

দাঁড়াও না একবার ভাই।”

“ওই ফুল ফোটে বনে,

যাই মধু আহরণে

দাঁড়াবার সময় তো নাই।”

“ছোট পাখি, ছোট পাখি,

কিচি-মিচি ডাকি ডাকি’

কোথা যাও বলে যাও শুনি?”

“এখন না ক’ব কথা,

আনিয়াছি তৃণলতা,

আপনার বাসা আগে বুনি।”

“পিপীলিকা, পিপীলিকা,

দল-বল ছাড়ি একা

কোথা যাও, যাও ভাই বলি।”

“শীতের সঞ্চয় চাই,

খাদ্য খুঁজিতেছি তাই

ছয় পায়ে পিল পিল চলি।”

কাজের লোক , নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্য।

 

ছড়ার শরীর নির্মাণের জন্য পদ্যকার ও গদ্যকারের মতো ছড়া-লেখকের অভিধানের দ্বারস্থ হতে হয় না। কিংবা অভিধান ঘেঁটে বেছে বেছে একগুচ্ছ শব্দ টেবিলে নিয়ে বসতে হয় না। লৌকিক ছড়ার সৃষ্টিকর্তারা আদিতে মুখে মুখে ছন্দ, শব্দ ও মিল খুঁজে পেতেন আধুনিককালের ছড়া-লেখকরাও পূর্বসূরিদের মতো ছড়া নির্মাণ করেন। তবে সাহিত্যের যেকোনো সৃষ্টির মাধ্যমে হওয়া উচিত গ্রহণযোগ্য ভাষা। কিন্তু ছড়ার বক্তব্য সহজবোধ্য ও স্পষ্ট হতে হয়। অক্ষরবৃত্তেও অনেক ছড়া দেখতে পাওয়া যায়।

 

বাবুই পাখিরে ডাকি, কহিছে চড়াই,

“কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই,

আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে

তুমি কত কষ্ট পাও রোধ, বৃষ্টি, ঝড়ে।”

বাবুই হাসিয়া কহে, “সন্দেহ কি তায় ?

কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়।

পাকা হোক, তবু ভাই, পরের ও বাসা,

নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর, খাসা।”

স্বাধীনতার সুখ, রজনীকান্ত সেন।

 

ছড়ার শব্দ-ঝঙ্কারই পাঠককে বিমোহিত করে এবং ছড়ার চলার গতি আপন ছন্দে-আনন্দে। শব্দের সাঁকো তার আপনা-আপনি তৈরি হয়ে যায়।

 

মূল উৎস:

০১) কবিতার ছন্দ- বাংলা একাডেমী

২) লোক সাহিত্য- ড. আশুতোষ ভট্টাচার্য

৩) দৈনিক ইত্তেফাক, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩

৪) ছড়ায় বাঙালী সমাজ ও সংস্কৃতি- সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ

৫) অনলাইনের বিভিন্ন ব্লগ।

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন