সুপান্থ মিজানের এক ডজন ছড়া

 সুপান্থ মিজানের এক ডজন ছড়া

 টুনটুনি

বেগুন গাছে বাঁধছে বাসা

ছোট্ট পাখি টুনটুনি,

তাই প্রতিদিন ভোরবেলাতে

শুনছি তারই গুনগুনি।

 

এদিক ওদিক ছোটাছুটি

আনছে ধরে খাবারও

খাবারগুলো বাসায় রেখে

যায় ছুটে যায় আবারও।

 

তাই না দেখে খোকাখুকি

করছে কানাকানিও

একে একে বাসার কথা

হয় যে জানাজানিও।

 

হঠাৎ করে দুষ্টুছেলে

বাসা ভেঙে আনছে যেই

টুনটুনিটা বাসার ব্যথায়

ডালে বসে কাঁদছে সেই।

 

তাই না দেখে ছোট্ট খুকি

ভাসছে চোখের জলে সে

বারেবারে যায় ছুটে যায়

বেগুনগাছের তলে সে।

 

বাসা ভেঙে দুষ্টুরা আজ

করছে যেমন মাস্তিটা

তাই দেখে আজ খুকির দাবি

দুষ্ট ছেলের শাস্তিটা।

::::::::

 

একটি শিশু

একটি শিশু আকাশ সমান স্বপ্ন দেখায় চোখে

অন্যরা কেউ পাহাড় হয়ে কষ্টকে খুব রোখে

একটি শিশু বাগিচা ফুল সুবাস ছড়ায় ধরায়

কেউবা আবার পিদিম হয়ে আলোয় ধরা ভরায়।

 

একটি শিশু পিতা-মাতার আশার বাতিঘর

ফুলের ছোঁয়ায় ব্যর্থ হলে জীবনটা হয় চর।

একটি শিশুর মুখের হাসি মাবাবাকে হাসায়,

অকালে যা বিদায় নিয়ে দুখ সাগরে ভাসায়।

 

একটি শিশুই পিতা-মাতার পরকালের মুক্তি

সঠিক পথে চলতে দেখায় হাজার লাখো যুক্তি।

 

একটি শিশুর হৈ-হুল্লোড়ে জাগে ঘরবাড়ি

তাকে পাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ঘর বাঁধে নরনারী।

 

শিশুর মাঝে ফুটে উঠুক মানবিক এক সত্তা

তাইতো সকল শিশুর জন্য চাচ্ছি নিরাপত্তা

::::::::

 

শিক্ষক

ইশকুল যেন ফুলের বাগান শিক্ষার্থী সব ফুল

শিক্ষক হলো মালীর মতন ফুলে সে মশগুল।

ফুলবাগানে ফুল ফুটাতে সময় কাটান মালি,

সুখে-দুখে জীবনটা তার নানান জোড়াতালি।

 

নিজের আলো বিলিয়ে করেন পৃথিবীটা আলো,

কষ্টে সৃষ্ট জীবনটা তার যায় না কভু ভালো।

যতই আসুক উজির নাজির কিংবা মস্ত নেতা

মালির আলো ছাড়া কভু হয় না কিছু জেতা।

 

পিতামাতার চেয়ে বেশি এই মালীদের মান,

বাদশা আলমগীরের কাছে তারই প্রমাণ পান।

শিক্ষক হলো আরেক পিতা মানুষ করেন যিনি

যার নিকটে রাজা প্রজা সবাই থাকেন ঋণী।

 

ফুল বাগানে ফুল ফোটে না মালীর যত্ন ছাড়া,

তাইতো মাথার তাজ অথবা রত্ন হলেন তারা।

আমরা যারা শিক্ষার্থী বা ফুল বাগানের ফুল,

শিক্ষকের মান রক্ষা করে বাঁচাব তার কূল

:::::::

 

শিশুদের

রোদ বৃষ্টিতে খুব প্রয়োজন ছাতার

শিখে নেয়া খুব প্রয়োজন সাঁতার।

বইয়ের সাথে খুব প্রয়োজন খাতার

বাবার মতোই খুব প্রয়োজন মাতার।

 

সকাল বিকাল খুব প্রয়োজন হাঁটার

লেখার সময় খুব প্রয়োজন কাঁটার।

ইস্কুল জুতো খুব প্রয়োজন বাটার

পাশ করিতে খুব প্রয়োজন খাটার।

 

ত্যাগ করাও খুব প্রয়োজন নাটার

যত্ন নেয়ার খুব প্রয়োজন গাঁটার

দুষ্ট বন্ধু খুব প্রয়োজন ছাঁটার

বলতে শিখা খুব প্রয়োজন হাঁটার

::::::

 

 

চকডাস্টার

মাথা মোটা নেতা আর বুক ফোলা মাস্টার

কেউ সাজে চক আর কেউ সাজে ডাস্টার

চক ভাবে আমি ছাড়া চোতাগুলো লিখা ভার

এমন তো দামি মাল এ জগতে কিবা আর?

 

চক পটু চোতা লিখে ডাস্টার মুছে দেয়

চোখ বুজে কাক হয়ে ভাগটাকে লুফে নেয়।

কলমের দাদাগিরি নাম লেখে দাদাতেই 

ছোঁতা পেলে ব্যাস্ত সে ডুব দেয় চাঁদাতেই।

গাধা যেন ভাবে একা আমি ছাড়া আছে কেউ?

কারা করে দাদাগিরি সাথে বাজে ঘেউ ঘেউ?

 

চক আজ ধুলোবালি পড়ে গুঁড়ো রাস্তায়

লাভ ক্ষতি কষে কষে মার খায় নাস্তায়।

 

অহমিকা ছেড়ে দিয়ে চলে এসো সুখালয়

মিলেমিশে করে দেই দেশটাকে প্রেমালয়।

::::

 

চাপাবাজি

চুপ চাপ কাজ করো কথা বলো অল্প

ডুবে থাকো কাজ নিয়ে অতি নয় গল্প।

 

নাই যার জমিজমা নাম দেয় ভূ-পতি

চেহারায় দুধ-কলা চাপাতেই কু-অতি

 

সব খানে মারে চাপা ডুব দিয়ে সাগরে

পায় না তো কেউ তাকে পায় শুধু নাগরে।

 

নিজদোষে চাপাবাজি করে না তো বন্ধ

কাটে কান পথে ঘাটে তবু রাখে ছন্দ।

 

কাজে কামে মিল নেই কথা বলে বাড়িয়ে

ধরা খেলে লোকজনে দেয় তাকে তাড়িয়ে।

 

চাপাবাজে ধাপাবাজে ভরে গেছে অঞ্চল

অবিরাম বোল ফুটে ধান্দায় চঞ্চল।

 

কথা শুনে মনে হয় মহাগুণী ফেরেস্তা

বারবার ধরা খেলে রাখে কেউ ফেরাস্থা?

 

চাপাবাজি পরিহারে হও যদি সাচ্চা

তবে হবে মানুষ ও মানুষের বাচ্চা।

:::::::::

 

আমার পৃথিবী

যানজট কোলাহল ছেড়ে বহু দূর

সবুজের স্নিগ্ধতা-ভেসে উঠে নূর

পৃথিবীও সুখ নেয় বিশুদ্ধতায়

নির্মল জলবায়ু দোলা দিয়ে যায়।

 

আমার পৃথিবী থাক সবুজের কোলে

সুখ ছোঁয়া লেগে থাক বৃক্ষের মূলে

হিমহিমে কাঁপে প্রাণ কুয়াশা চাদর

চিরসাথি লালঠোঁটি মায়ার আদর।

 

হিমহিম শিশিরেও মুক্তোর দানা

পল্লির ঘাসগুলো দেখে যায় জানা

খোকাবাবু নিয়ে আসে রসভরা হাড়ি

কাঁচামিঠা রস নিয়ে লাগে কাড়াকাড়ি।

 

তাফালের পাশে বসে ওম অনুভব

গরীবেরা সেই সুখ লুফে নেই সব

টুপটুপ ঘরচালে শিশিরের চুম

সতেজ শরীরে আসে শান্তির ঘুম।

:::::::::

 

আলোর পথে

কাঁটার ফুলে নাটক সাজাও অহরহ

সত্যকে চাপ দিয়ে কেবল মিথ্যে কহ

ভাবলে না তো করলে তুমি কারই ক্ষতি

পড়বে কবে মনের মাঝে সত্যজ্যোতি?

 

এমন করে কাটিয়ে গেলে জীবনটাকে

পড়তে হবে ওপার তোমায় দুর্বিপাকে।

মিথ্যে দিয়ে হাজার পাপে জীবন গড়া

জীবন তোমার ব্যর্থ হবে পড়লে ধরা।

 

চেয়ে দেখো সূর্য এখন মাঝ গগনে

ধীরে ধীরে যাচ্ছে সময় সাঁঝলগনে।

ফুলের বনে দৃষ্টিতে পাই সুখের হাসি

পবিত্রতার সুবাস ছড়ায় রাশি রাশি

 

সরলরেখায় জীবনটাকে দাও রাঙিয়ে

মানবতার দেয়ালে মন নাও টাঙিয়ে

ফিরে এসো সত্যসুখের আলোর পথে

দুজাহানে ভাসবে সুখের দিব্য রথে।

:::::::

 

টাকুদার ঝুলি

হামবড়া দাদা তিনি মাথাভরা টাক

সেই টাকে মল ছাড়ে আকাশের কাক

উরন্ত কাক কালো কালো তার মল

টুপটুপ মেঘ থেকে পড়ে ফোটা জল।

 

জলেমলে একাকার দাদাজির দেহ

আচমকা দেখে তাকে চিনবে না কেহ।

য়েমুছে দাদাসাব গায়ে মাখে তেল

শুধু তেলে তৃপ্ত না মাখে সেথা জেল।

 

তেলেজেলে টাকখানা চকচকা চক

উড়ে এসে বসে সেথা ফকফকা বক।

কিশোরের কাছে টাক ফুটবল-মাঠ

টাক নিয়ে শিশুদের মজাদার পাঠ।

 

শাক দিয়ে মাছ ঢাকে ক্যাপ দিয়ে টাক

প্রকৃতির সাথে তার থাকে খুব ফাঁক।

টাকুদার রেডিওতে গীবতের গান

সেই গান গেয়ে তিনি খুব মজা পান

 

টাকে টাকে টনটন মিছামিছি বুলি

কদাচারে ভরে আছে টাকুদার ঝুলি।

:::::

 

আমার প্রিয়

এইতো আমার গাঁয়ের ছবি

গাঁয়ে করি বাস

মুক্ত আলো বাতাস মেখে

শান্তিতে লই শ্বাস।

 

মেঠো পথ আর ঘাট পেরিয়ে

তেপান্তরের মাঠ

যেথায় বসে আকাশ মাটির

মিলনমেলার হাট।

 

কৃষক মনে সুখের হাওয়া

ঢেউ তুলে দেয় ধান

ঢেউয়ে ঢেউয়ে নেচে উঠে

প্রাণ খুঁজে পায় প্রাণ।

 

এই মাটিতেই জন্ম আমার

এই মাটিতেই শেষ

সবার চাইতে প্রিয় আমার

এই মাটি মা দেশ।

::::::::

 

বড়ো মিয়া

চাপ চাপ চাপ

আসিতেছে সমাজের

বড়ো মিয়াসাব।

ইয়া বড়ো নাম তার

চারদিকে দাম তার

তার কোনো কাজে কভু

হয় না তো পাপ

চাপ চাপ চাপ।

 

আসিতেছে সমাজের

বড়ো মিয়াসাব

পান শুধু মায়না যে

রান ছড়া খায় নাযে 

ইহকাল নিয়ে তার

মনে বাড়ে চাপ

 

ঐ দেখ আসিতেছে

বড়ো মিয়াসাব।

ঘরে ঘরে গিয়ে খায়

মিলাদে ও বিয়ে খায়

খাওয়া ছড়া আর কিছু

নেই তো আলাপ

কারো সথে চলাফেরা

খায় না ও খাপ

দূর হোক এই সব

বড়ো মিয়াসাব।।

::::::

 

গাঁয়ের মায়া

এই শহরে খুব বিহানে

নেই মোরগের বাগ

কা কা করা বিকষ সুরে

মনে উঠে রাগ।

 

একটুখানি বেলা হলেই

গাড়ি পুরুৎ পুরুৎ,

পা পিছলে আয়ুর বেলুন

হয়ে যাবে ফুরুৎ।

 

মন বসে না এই শহরে

নেই বিশুদ্ধ কিছু,

ঘাতক হয়ে ফরমালিনে

ছুটছে পিছু পিছু।

 

চলো না মা যাই গেরামে

থাকব সবুজ ছায়ায়,

মেঠোপথ আর নদীনালা

পুকুর ঘাটের মায়ায়।

:::::

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন