কোরআনের আলোকে পৃথিবী ও সৌরজগতের সৃষ্টি
গেরিলা আজাদ
মহাকাশ বিজ্ঞানীদের গবেষণা মতে সৌরজগত
সৃষ্টির মোটামুটি ১০০০ মিলিয়ন বছর পর একগুচ্ছ সংঘর্ষের ফলে পৃথিবী সৃষ্টি। আজ থেকে
৪৫৪ কোটি বছর আগে পৃথিবী নামক গ্রহটির আকৃতি পায়, পায় লৌহের একটি কেন্দ্র
এবং একটি বায়ুমন্ডল। পৃথিবী নামক গ্রহের সাথে চরম সংঘর্ষ হয়েছিল থিয়া নামের একটি
গ্রহের। সংঘর্ষের সময় পৃথিবীর বয়স ছিল ১০ কোটি বছর। সংঘর্ষের কারনে পৃথিবী ও থিয়া
জুড়ে যায় বা এক হয়ে যায়। তৈরি হয় নতুন গ্রহ। বিজ্ঞানীদের এইরূপ মতামতের সাথে
ইসলামের বা কোরআনের মতভেদ আছে।
কোরআন বলে পৃথিবী ও এর ভিতরে বিদ্যমান সকল কিছু মহান আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন মাত্র ৪ দিনে। ২ দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করা হয়েছে এবং অপর ২ দিনে ভূমন্ডলের সাজসরঞ্জাম, পাহাড় নদী, খনি, বৃক্ষ, সৃষ্ট জীবের পানাহারের বস্তু সৃষ্টি করা হয়েছে। সুর আল আরাফ-৫৪, সুরা ইউনুস -৩, সুরা হুদ-৭, সুরা আল ফোরকান-৫৯, সুরা সজদা-৪, ক্বাফি-৩৮, এবং হাদিদ-৪ এই ৭ টি স্থানে ৬ দিনে পৃথিবী ও সৌরজগত সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। অতঃপর মহান আল্লাহ আরসের উপর সমাসীন হয়েছেন। তিনি পরিয়েছেন রাতের উপর দিনকে। তিনিই সৃষ্টি করেছেন সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্র দৌড়ে স্বীয় আদেশের অনুগামী। শুনে রাখো তারই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ দান করা। আল্লাহ বরকতময় যিনি বিশ্ব জগতের প্রতিপালক ( সুরা আরাফ-৫৪)।
সুরা ফুসসিলাতের এই ৪ টি
(৯-১২), বলুন তোমরা কি সেই স্বত্ত্বাকে অস্বীকার করো যিনি পৃথিবী
সৃষ্টি করেছেন ২ দিনে এবং তোমরা কি তার সমকক্ষ স্থির করো। তিনিতো সমগ্র বিশ্বের
প্রতিপালক। তিনি পৃথিবীর উপরি ভাগে অটল পর্বতমালা স্থাপন করেছেন। তাতে কল্যান
নিহিত রেখেছেন। এবং ৪ দিনের মধ্যে তাতে তার খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন।
অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল ধূম্রকুঞ্জ। অতঃপর তিনি তাকে ও
পৃথিবীকে বল্লেন—তোমরা উভয়ে আসো—ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বল্লো আমরা
স্বেচ্ছায় আসলাম। অতঃপর তিনি আকাশ মন্ডলিকে ২ দিনে সপ্তাকাশ তৈরি করলেন এবং
প্রত্যেক আকাশে তার আদেশ প্রেরণ করলেন। আমি নিকটতম আকাশকে প্রদীপ মালা দ্বারা
সুশোভিত ও সংরক্ষিত করেছি। এটা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা।
মহান আল্লাহ ৪ দিনে পৃথিবী, প্রাণীজগত, সমুদ্র এবং তার তলদেশে প্রাণী ও উদ্ভিদ এবং পাহাড় পর্বতমালা অত্যন্ত সুনিপুণ ভাবে তৈরি করেছেন। শুধু মানুষ সৃষ্টি করবেন বলে। মানুষের বসবাসের উপযোগী করার জন্য যেখানে যা কিছু করা প্রয়োজন তাই করেছেন। সূর্য ও চন্দ্র মানুষের কল্যাণেই সৃষ্টি করেছেন। সূর্য তাপ বিকিরণ করে পৃথিবীর উপর। রৌদ্রে ক্লোরোফিল থাকে তাতে ফসল বৃক্ষাদি জন্মায়। তিনি বায়ুমন্ডল তৈরি করেছেন। মেঘমালা তৈরি করেছেন যা থেকে বৃষ্টি হয়। ফসল ফলে। মহান আল্লাহ প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা উদ্ভিদ সৃষ্টি করেছেন মানুষের পরিপূরক হিসাবে। উদ্ভিদ বাঁচার জন্য কার্বনডাই অক্সাইড ( co2) গ্রহন করে অক্সিজেন (O২) ত্যাগ করে। অপর দিকে মানুষ বা প্রানী বাঁচার জন্য (O২) গ্রহন করে কার্বনডাই অক্সাইড (CO২) ত্যাগ করে। এই ভাবে একে অপরের উপর নির্ভরশীল হয়ে পৃথিবীতে বেঁচে আছে আদিকাল থেকেই।
পৃথিবীর পৃষ্ঠদেশ মহান আল্লাহ বায়ুমন্ডল দ্বারা ঢেকে দিয়েছেন। সূর্যের আলো তে ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মি ( Ultra violent ray বা UVR থাকে। ক্ষতিকর কার্বন মনোক্সাইড (Co) গ্যাস থাকে। এদের ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয়া যাতে পৃথিবীতে পৌঁছতে না পারে সে কারণে বায়ুমন্ডলের উপরিভাগে ওজন (O3) স্তর দ্বারা ঢেকে দিয়েছেন। পৃথিবীর মানুষ, প্রাণীজগত কে সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য। পৃথিবী ও মহাকাশ মহান আল্লাহ ৬ দিনে তৈরি করেছেন। এতে শুধু পৃথিবী তৈরিতেই সময় দিয়েছে ৪ দিন। অপর দিকে সৌরজগতের চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্রপুঞ্জ, উল্কা এবং সীমাহীন ব্লাকহোল সৃষ্টিতে আল্লাহ সময় দিয়েছেন মাত্র ২ দিন। এখানে ১ দিন সমান এক হাজার বছর। অতএব মহান আল্লাহ অতি যত্নসহকারে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। এবং উহা সৃষ্টি করেছেন মানুষের পরিপূরক হিসাবে। মানুষের কল্যাণে। মহান আল্লাহ সব কিছু সৃষ্টি করেছেন সুপরিকল্পিত ভাবে, সুনিপুণ ভাবে যার সৃষ্টিতে কোন প্রকার ভুল নাই।
এই পৃথিবী নামক গ্রহটি একটি গোলক রূপে মহাশূন্যে ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে। তা স্বীয় মেরু কিলকের উপর এমন নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে আবর্তিত হচ্ছে যে, তার ফলে দিনের পর রাত এবং রাতের পর দিনের আগমন নির্গমন অব্যহত ধারায় সংঘটিত হচ্ছে। সেই সংঙ্গে তা সূর্যকে কেন্দ্র করেও প্রদক্ষিণ করছে এবং একটি বৎসরের সুনির্দিষ্ট সময়কালের মধ্যে স্বীয় একটি চক্কর পূর্ণ করে নেয়। এই গতিময়তা পৃথিবীকে মহাশূন্যের দিকে স্থিত করে রাখে। মেরু রেখার উপর নিজ অক্ষের দিকে পৃথিবীর ২৩° ডিগ্রি পরিমাণ ঝুকে থাকার দরুন মৌসুমের পরিবর্তন নিয়মিত ভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। তার ফলে পৃথিবীর অধিক এলাকা আবাদযোগ্য হয়ে যাচ্ছে এবং নানা প্রকারের ও ধরনের রঙবেরঙের শ্যমলতা উর্বরতা জমিনের চাকচিক্য ও কল্যান কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়ে যাচ্ছে। যদি এই পৃথিবী গ্রহটি আবর্তিত না হয়ে স্থবির ও স্থিতিশীল হয়ে থাকতো তা হলে উদ্ভিদ জগতে ও উৎপাদনে এত বৈচিত্র্য ও নানা রকম ফসল লাভ করা সম্ভব হতো না।
এছাড়া জীবন রক্ষা করার জন্য একান্তই অপরিহার্য গ্যাস সমূহ পৃথিবীর উপরিভাগে মহাশূন্যে প্রায় ৫০০ মাইল উচ্চতা পর্যন্ত পরিব্যপ্ত হয়ে আছে। তার একটি অত্যান্ত পুরুস্তর ভূমণ্ডলকে বেস্টন করে রয়েছে। ফলে মহাশূন্যে থেকে দুই কোটি সংখ্যায় প্রতি সেকেন্ডে ত্রিশ মাইল বেগে দৈনন্দিন ভূমন্ডলের শূন্যলোকে প্রবেশকারী উল্কাসমুহের ধ্বংসকারীতা থেকে সংরক্ষিত থাকা পৃথিবীর পক্ষে সম্ভব হচ্ছে। বায়ুর স্তর ও অন্যান্য প্রভাব প্রতিক্রিয়া ছাড়াও তাপমাত্রা কে জীবনের স্থিতির জন্য অপরিহার্য সীমার মধ্যে রয়েছে। বায়ু সমুদ্র সমুহের তাজা পানির বাষ্পকে উড়িয়ে মেঘের আকারে বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যায় এবং বিস্তীর্ণ অঞ্চলের তৃষ্ণার্ত জমিন কে বৃষ্টির পানি দিয়ে সিক্ত করে দেয়। এই বৃষ্টি বর্ষন না হলে গোটা পৃথিবীই পানিহীন মরুভূমিতে পরিনত হতো। অন্য কথায় প্রকৃতি সমুদ্র ও বাতাসের সমন্বিত ব্যবস্থাকে ভূপৃষ্ঠে জীবনের সঞ্চার ও সংরক্ষণের অন্যতম প্রধান উপায় বানিয়ে দিয়েছে। ছাড়া সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব যদি বর্তমানের তুলনায় দ্বিগুণ করে দেয়া হতো তা হলে সূর্য থেকে প্রাপ্ত উত্তাপের পরিমান হ্রাস পেয়ে মাত্র একচতুর্থাংশ অবশিষ্ট থেকে যেত। পৃথিবীর আবর্তনের গতি হয়ে যেত অর্ধেক পরিমান। শীত মৌসুমের সময়কাল দীর্ঘ হয়ে দ্বিগুণ হয়ে যেত। ফলে জীবন এখানে বরফের মত জমাটবদ্ধ হয়ে যেত।
অপরদিকে সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যকার দূরত্ব হ্রাস করে যদি অর্ধেক করে দেয়া হতো তা হলে পৃথিবীর উপর সূর্যের তাপ বর্তমানের তুলনায় চারগুণ বৃদ্ধি পেয়ে যেত। পৃথিবীর আবর্তন গতি দ্বিগুণ তীব্র হয়ে যেত। মৌসুমের পরিবর্তন হতোই না আর শীতের মৌসুম আসলেও তার সময়কাল অর্ধেক হয়ে যেতো। ভূপৃষ্ঠে তখন সূর্যের তাপ এতই বৃদ্ধি পেয়ে যেত, যার ফলে এখানে জীবনের স্থিতি অসম্ভব হয়ে পরতো। সবকিছু জ্বোলেপুড়ে ছারখার হয়ে যেতো। ভূ-গ্রহের বর্তমান আকার, সূর্য থেকে তার অবস্থানের দূরত্ব এবং তার বর্তমান নিদিষ্ট আবর্তন গতিমাত্রার কারণেই পৃথিবীতে জীবন ধারণ সম্ভব হচ্ছে। মানব প্রজাতির পক্ষে স্বাভাবিক মানসিক ও আত্মিক—অধ্যাত্বিক সুখ শান্তি লাভে ধন্য হওয়া সম্ভবপর হচ্ছে। পৃথিবীর ৪ ভাগে ৩ ভাগ জল ও ১ ভাগ স্থল। সমুদ্র সাগর মহাসাগরের পানি লবনাক্ত। কিন্তু মানুষের বেঁচে থাকার জন্য সেই জনপদে হাওড়, বাওর, নদ নদীর পানি মৃদু পানি, সুপেয় পানি। ভূগর্ভস্থ পানি সুপেয়। যদি মহান আল্লাহ সমুদ্রের লোনা পানির বাস্প থেকে সৃষ্ট মেঘের বৃষ্টির পানি লবনাক্ত করে দিতেন ফসলের ক্ষেত জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যেতো।
অতএব আল্লাহর সৃষ্টি প্রত্যেকটি জিনিস যুক্তিসঙ্গত পরিকল্পিত ও নির্ভুল। প্রাকৃতিক ভাবে যদি এসব সৃষ্টি হতো তবে তাহা এত গুছানো ও নির্ভুল হতো না। অতএব পৃথিবী, সৌরজগত, মহাকাশ সকল কিছুই মহান আল্লাহ নিখুঁত ও নির্ভুল ভাবে সৃষ্টি করেছেন। কোন কিছুই প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্টি হয় নাই।