‘বিদ্রোহী’ কবিতা ও কবির বিদ্রোহী সত্তা ।। শ্যামসুন্দর দেবনাথ

‘বিদ্রোহী’ কবিতা ও কবির বিদ্রোহী সত্তা

শ্যামসুন্দর দেবনাথ

             ছবি : ইন্টারনেট

দীর্ঘ দিনের দাসত্বশৃংখলে আবদ্ধ, পরমুখাপেক্ষী হয়ে পড়া জাতিকে শোষণ-লাঞ্ছনা-বঞ্চনা-নিপীড়ন ও দুঃশাসনের নাগপাশ থেকে পরিত্রাণ করতে গর্জে উঠলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘বিদ্রোহী’ কবিতায়

 “বল বীর-

বল উন্নত মম শির!

……………

……………

আমি চির-বিদ্রোহী বীর--

আমি বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির উন্নত-শির।”

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘ছন্দ সরস্বতীর বরপুত্র’ হিসেবে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে আখ্যায়িত করেছেন। নজরুলের মুখে ‘বিদ্রোহী’ কবিতা পাঠ শুনে বিশ্বকবি আশীর্বাদ করে বলেছেন, “তুমি যে বিশ্ববিখ্যাত কবি হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।”

‘বিদ্রোহী’র প্রতিটি স্তবক, প্রতিটি পংক্তি, প্রতিটি শব্দে শরীরের প্রতিটি রক্তকণা উজ্জীবিত হয়ে ওঠে, বজ্রনিনাদে প্রকম্পিত হয়ে হৃদয়তন্ত্রী ও বিবেকবোধে ঘোর কাটে, তন্দ্রাবিষ্ট অবসাদগ্রস্ত যুবশক্তি তথা জাতি-সমাজকে অপ্রতিরুদ্ধ ধারায় ঊর্মিমালার ঝনাৎঝনাৎ আওয়াজ তোলে-অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার, নিপীড়ন নানাবিধ সামাজিক অসংগতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধ। অগ্নিবীণা’র ‘বিদ্রোহী’তে কবি যেমন রুদ্রমূর্তিতে জেগেছেন, তেমনি মধ্যম পুরুষকেও জাগিয়েছেন অগ্নিঝরা কণ্ঠে কাব্যিক আহ্বানে।

মানবশিশুর জন্মকালীন যেমন সূতিকাগার আবশ্যক, তেমন কবিতা সৃষ্টিরও আঁতুড়ঘর অবধারিত। আর সে কবিতাটি যদি জাতীয় কবির বা বিশ্বখ্যাত কবির আপন সত্তাবাহক ও গণজাগরণে আলোড়ন সৃষ্টিকারী, মুক্তির বীজমন্ত্র বহনকারী হয়ে থাকে, তবে সে কবিতার আঁতুড়ঘর অনুসন্ধান কাব্যানুরাগী, সাহিত্যিক বা গবেষককে তাড়া দেয়। বাংলাদেশের জাতীয় কবি, বিশ্বখ্যাত বিদ্রোহী কবি, সাম্যের কবি, চিরযৌবনের প্রতীক, কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত আলোড়নকারী কবিতা ‘বিদ্রোহী’র জন্ম কলকাতা তালতলা লেনের ৩/৪ সি, বাড়ি। বাঁধনহারা কবিমনের প্রথম উদ্দাম-উচ্ছ্বাস ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি রচিত হয় এ বাড়িতেই। এ বাড়ির কোনো এক অন্ধকার কক্ষে লণ্ঠনের মিটিমিটি আলোয় সিসৃক্ষু কবি তাঁর কাব্যচিন্তার ভ্রুণটি কলম বা পেন্সিলের মাধ্যমে বর্ণমালায় শব্দ গেঁথে সাদা পৃষ্ঠায় গর্ভমোচন করলেনভূমিষ্ঠ হলো ‘বিদ্রোহী’সুতীব্রকণ্ঠে উদ্ধত উচ্চারণে

“বল বীর-

বল উন্নত মম শির!

……………

……………

আমি চির-বিদ্রোহী বীর--

আমি বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির উন্নত-শির।”

কমরেড মুজাফফর আহমদের স্মৃতিকথা মতে, এ পুরো বাড়ি পশ্চিমগাঁর নওয়াব ফয়জুন্নিসা চৌধুরাণীর নাতিরা ভাড়া নিয়েছিল। নীচতলার দক্ষিণ-পূর্ব ঘরটিতে নজরুল ইসলাম আর মুজাফফর আহমদ ভাড়া থাকতেন। এ ঘরেই ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটির জন্ম। খুব সম্ভব শেষ রাতে। কেননা রাত দশটায় মুজাফফর আহমদ ঘুমিয়ে পড়েন। তাঁর মতে, নজরুল গভীর রাত্রে সজাগ থেকে লিখলে খুব সকালে উঠতে পারতেন না। খুব সকালেই মুজাফফর আহমেদ ঘুম থেকে উঠে হাত-মুখ ধুয়ে বসেছেন, তখনই নজরুল তাঁর লেখা একটি কবিতা বের করে মোজাফফর আহমদকে শোনান। আর এ ‘বিদ্রোহী’ কবিতার প্রথম শ্রোতাই হলেন মোজাফফর আহমেদ। কিন্তু কবিতা শোনার পর তিনি স্বভাবসুলভ বৈশিষ্ট্যের কারণেই কোনো উচ্ছ্বাস বা কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি। মুজাফফর আহমদের উক্তি, নজরুল ১৯২১ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে কোনো এক শেষ রাতেই ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি পেন্সিলে লিখেছিলেন। কবিতাটি প্রকাশের জন্য নজরুল ‘মোসলেম ভারতে’র সম্পাদক আফজালুল হককে প্রথমে দিয়েছিলেন। একই দিনে আফজালুল হক চলে যাওয়ার পরে ‘বিজলী’ পত্রিকার শ্রী অবিনাশ চন্দ্র ভট্টাচার্য কবিতাটি শুনে এক কপি নিয়ে যান এবং ১৯২২ সালের ৬ জানুয়ারি (২২ শে পৌষ ১৩২৮ বঙ্গাব্দ), শুক্রবার ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি শ্রী নলিনীকান্ত সরকার সম্পাদিত (সাপ্তাহিক) ‘বিজলী’ পত্রিকায় প্রথম ছাপিয়ে দিলেন। ফলে ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি প্রথম প্রকাশের সম্মান ‘বিজলী’ পত্রিকারই। ‘বিদ্রোহী’ ছাপা হবার পর ‘বিজলী’ সব কপিই অতি দ্রুত বিক্রি হয়ে যায়। ফলে পাঠকদের চাহিদা মেটাতে একই সপ্তাহে ‘বিজলী’ আবারো ছাপানো হয়। দু’দফায় ২৯ হাজার কপি ছাপানো হয়েছিল এবং প্রায় দু’লাখের মতো পাঠক সে সময় ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি পাঠ করেছিল। মাসিক ‘মোসলেম ভারত’ পত্রিকায় ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি আগে দিলেও সেটি ঐ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় মাঘ মাসে অথবা তারও পরে। তবে নজরুল সম্পাদিত ‘ধূমকেতু’তে ২২ আগস্ট ১৯২২ খ্রিস্টাব্দ, মাসিক ‘বসুমতি’তে ১৩২৯ বঙ্গাব্দ, রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত মাসিক ‘প্রবাসী’তে মাঘ ১৩২৮ বঙ্গাব্দ, মাসিক ‘সাধনা’তে বৈশাখ ১৩২৯ বঙ্গাব্দে ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি ছাপানো হয়েছিল। কবিতাটি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হলে দেশজুড়ে ব্যাপক জাগরণ সৃষ্টি হয়। কবির উদ্দীপ্ত বিদ্রোহী মনন, রুদ্ররূপ, বিদ্রোহী সত্তা এবং অসাধারণ শব্দবিন্যাস, অনুপ্রাস ও ছন্দ বাঙালির মানসপটে আজও দোলা দেয়- “চির উন্নত-শির”। সর্বপ্রথম ৬ জানুয়ারি ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে ‘বিজলী’ পত্রিকায় ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি প্রকাশিত হলে পরদিন ৭ জানুয়ারি সকালবেলা ‘বিজলী’ পত্রিকার চারটি কপি হাতে নিয়ে কবি কাজী নজরুল ইসলাম কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়া উপস্থিত হন। তেইশ বছরের টগবগে যুবক কবি নজরুল বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে উদ্দেশ করে বিচিত্র অঙ্গভঙ্গিমায় চিৎকার করে বলছেন, “গুরুজি, আপনাকে হত্যা করব--গুরুজি, গুরুজি!”

 রবীন্দ্রনাথ উপর থেকে বললেন, কী হয়েছে? ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছ কেন? এসো, উপরে এসে বসো। “নজরুল উপরে যেয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সম্মুখে বসিয়ে বিচিত্র ভঙ্গিমায় ‘বিদ্রোহী’ কবিতা শুনিয়ে দিলেন। রবিঠাকুর বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে শুনছিলেন, অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলেন নজরুলের মুখের দিকে। পাঠশেষে রবিঠাকুর ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালেন আর দু’হাত বাড়িয়ে তরুণ কবি নজরুলকে বুকে টেনে নিলেন। বললেন, “হ্যাঁ, কাজী, তুমি আমাকে সত্যি হত্যা করবে। আমি মুগ্ধ হয়েছি তোমার কবিতা শুনে। তুমি যে বিশ্বখ্যাত কবি হবে, তা’তে কোনো সন্দেহ নেই। তোমার কবিতার জগৎ আলোকিত হোক, ভগবানের কাছে এই প্রার্থনা করি।”

মাত্রাবৃত্ত মুক্তক ছন্দের লিখিত ১১টি স্তবকবিশিষ্ট ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটির ১৩৯টি পংক্তির প্রতিটি যেন লৌহবর্তের চলিষ্ণু রেলগাড়ির বগির মতো, পরম্পরাগত টান বা বন্ধনযুক্ত যা পঠনকালে পরবর্তী পংক্তির প্রতি অনসৃত আসক্তিতে পাঠক, আবৃত্তিকারের কণ্ঠে গতিময়তা লাভ করে। শুধু পংক্তির আন্তবন্ধনই নয়, ৮৬৮টি শব্দের মধ্যেও রয়েছে চমৎকার এক চুম্বকীয় আবেশ, অনুপ্রাস, ব্যঞ্জনাযা পাঠক-শ্রোতাকে বিমুগ্ধ করে, উজ্জীবিত করে, দ্রোহদৃপ্ত করে, সমাজের অনিয়ম-অন্যায়-শোষণ-বঞ্চনার প্রতিরোধে বিদ্রোহীর পৌরুষঋদ্ধ এক অপ্রতিরোধ্য রূদ্রমূর্তিতে সম্মুখস্থ করে তোলে। আমিত্ববাচক ১৬০টি শব্দের মধ্যে ‘আমি’র উপস্থিতি ১৪৬ বার, যে আমি প্রকৃত পরমপুরুষকে আবিষ্কার করে অনন্ত-অসীমে পরিব্যাপ্ত পরমসত্যে লীন হয়ে কবিসত্তাকে প্রস্ফুটিত করেছে। তাই কবি পরুষোত্তমের মতোই নির্দ্বিধায় উচ্চারণ করতে পেরেছেন

“আমি মৃন্ময়, আমি চিন্ময়,

আমি অজর অমর অক্ষয়, আমি অব্যয়।

……………………….

জগদীশ্বর-ঈশ্বর আমি পরুষোত্তম সত্য,”

এ অংশটুকু শ্রীমদ্ভগবদগীতার পঞ্চদশ অধ্যায়, পরুষোত্তম-যোগকে স্মরণ করিয়ে দেয়—“বিভর্ত্যব্যয় ঈশ্বরঃ (১৭ তম শ্লোকাংশ) ও ‘প্রথিতঃ পুরুষোত্তমঃ” (১৮তম শ্লোকাংশ)। ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় শিল্পঋদ্ধ শব্দবিন্যাস, শব্দশৈলী, বাক-ব্যঞ্জনা, অলংকার-প্রজা, অসাম্প্রদায়িক চেতনাদীপ্র শব্দাহরণ এবং বিভিন্ন ধর্ম, ঐতিহ্য, ইতিহাস, পুরাণিকী কথা (myth), কিংবদন্তি লোকশ্রুতি, লোকবিশ্বাস থেকে উপকরণ উপাদান সমীকৃত করে আপন বিদ্রোহীসত্তার অবায়বে ছন্দ-মাধুর্যময় কাব্যিক গুণ পাঠকচিত্তকে আজও দ্রবীভূত করে। কবিতার শেষদিকে অত্যাচারী ও অত্যাচারের অবসান কামনায় বিদ্রোহী কবির উৎকণ্ঠ ঘোষণাউৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল যতোদিন পর্যন্ত প্রশমিত না হবে, ততোদিন কবির এই বিদ্রোহী সত্তা শান্ত হবে না। অভ্রভেদী চির উন্নত এই বিদ্রোহী চিরদিন শিবরূপে বিরাজ করবে।

‘বিদ্রোহী’ কবিতাটির প্রকাশ নজরুলকে স্বল্প সময়ের মধ্যে যশস্বী করে তুললেও কতিপয় নিন্দুক-সমালোচক তাঁকে উন্মাদগ্রস্ত, পাগল বলে অপবাদ দিয়েছে। সকল অপবাদ, প্রতিহিংসা অতিক্রম করে ‘বিদ্রোহী’ কবিতা ও কবি নজরুল বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায়ও প্রণিধানযোগ্য ও অপরিহার্য। বীররস-প্রধান ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটিতে উৎকীর্ণ হয়ে আছে প্রেম ও বিরহ রসের সংমিশ্রণে গড়া চমৎকার শব্দমূর্তি। ‘বিদ্রোহী’ পাঠে সৃষ্ট প্রাণনতা ও করুণাকাতর আবেগে দোলায়িত চিত্তে দুঃখ-জ্বালা-বঞ্চনা-ক্ষোভের সমান্তরালে প্রেম-বিরহের আর্তিতে বেজে ওঠে বীণানিন্দিত করুণ সুর

 “আমি বন্ধন-হারা কুমারীর বেণী, তন্বী-নয়নে বহ্নি,

……………………………….

……………………………….

আমি চপল মেয়ের ভালোবাসা, তার কাঁকন-চড়ির কন্-কন্।”

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের কবল থেকে দেশমুক্তির ব্যাপক আন্দোলনে সারা ভারতবর্ষ যখন উত্তাল হয়ে ওঠে, এমন একটি সময়ে কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিদ্রোহী সত্তায় আবির্ভূত হয়ে ‘বিদ্রোহী’ কবিতার প্রতিটি চরণজুড়ে উদ্দীপ্ত শব্দবাণে ও উপমার মাধ্যমে সমাজবিপ্লবের ডাক দিয়ে যান। সমাজের নিত্যদিনের অনিয়ম-অসমতা-অন্যায়ের বিরুদ্ধে এ কবিতায় কবির তীব্র ক্ষোভ পরিব্যক্ত। সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসকদের সুদীর্ঘকালের শাসন-শোষণ-জোরজুলুম-নিপীড়নে নিষ্পেষিত ভারতবর্ষের সাধারণ জনগণ অনেকটা ভীতিবিহ্বল হয়ে পড়ে, অনেকান্তে আত্মসচেতনতা হারিয়ে ফেলে। পক্ষান্তরে কিছু মানুষ যারা অন্যায়-অবিচারে অসহ্যবোধ করে তারাই দ্রোহী হয়ে ওঠে, প্রতিবাদ করে, হয়ে ওঠে আলোড়িত বিদ্রোহী। এরূপ এক কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

অধ্যাপক শিবনারায়ণ রায় বলেন, “সেই যুগের একটা ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়েছিলযেটা হলো দেশের স্বাধীনতা সঙ্গে সমাজবিপ্লবকে মেলানো। স্বদেশী আন্দোলনে যারা যুক্ত ছিলেন তারা সমাজবিপ্লবের কথা ভাবতেন না। কিন্তু এই বিপ্লব ছিল নজরুলের রক্তে।” শিব নারায়ণের মূল্যায়ণে—‘যারা সবকিছু ভেঙ্গে-চুরে নতুন করে গড়তে চাইছে তাদের প্রেরণার উৎস ছিল নজরুলের জ্বালাময়ী কবিতা—‘বিদ্রোহী’। এক হাজার বছরের বাংলাসাহিত্যে তাঁর মতো অসাম্প্রদায়িক কবি আর দেখা যায়নি। তাঁর পরিচয় ছিল মানুষ হিসেবে।”

‘বিদ্রোহী’ কবিতাতে দেখি, হিন্দু পুরাণ থেকে যেমন উপমা টেনেছেন, তেমনি ইসলামিক ইতিহাস থেকেও উপমা ব্যবহার করেছেন। আবার সচেতনভাবে ইউরোপীয় মিথও এনেছেন এ ‘বিদ্রোহী’তে। এ কবিতা নজরুলের বিদ্রোহী সত্তার কেন্দ্রবিন্দু শিব। শিবের বিচিত্র রূপে, ভিন্ন ভিন্ন নামে নজরুল তাঁর বিদ্রোহী মানসকে প্রকাশ করেছেন।

‘বিদ্রোহী’ কবিতায় বিভিন্ন মিথ-উৎস থেকে আহৃত যেসব উপমান পদের প্রতীকী ব্যঞ্জনায় কবি কাজী নজরুল বিদ্রোহী সত্তায় নিজেকে উপস্থাপন করেছেন, তার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি নিম্নে উল্লেখ করা হলো

 *রুদ্র ভগবান: ভগবানের রুদ্ররূপ অর্থাৎ শিব (মহাদেব)।

 *নটরাজ: ধ্বংস সাধনে শ্রেষ্ঠ শিবকে বলা হয় ‘নটরাজ’।

 *ধূর্জটি: যে জটী বা জটাধারীর মাথায় ত্রিলোকের চিন্তাভার তিনিই ধূর্জটিমহাদেব, শিব।

 *নৃত্য পাগল ছন্দ: মহাদেবকে ‘পাগল’ বা ‘পাগলবাবা’ বলা হয়। ‘নৃত্য পাগল ছন্দ’ দ্বারা মহাদেবের নাচের তাল-মাত্রা-ছন্দের দৃশ্য স্মরণ করিয়ে দেয়।

 *কৃষ্ণ-কণ্ঠ: সমুদ্র মন্থনে ভয়ঙ্কর বিষ উত্থিত হলে পৃথিবী ধ্বংসের উপক্রম হয়। ব্রহ্মার অনুরোধে সে বিষ মহাদেব শুষে নেন। এতে তাঁর কণ্ঠ নীল হয়ে যায়। এইজন্য মহাদেবকে নীলকণ্ঠ বা কৃষ্ণ-কণ্ঠ নামে ডাকা হয়।

 *ব্যোমকেশ: ‘ব্যোম’ মানে আকাশ আর ‘কেশ’ অর্থ মাথার চুল। স্বর্গ থেকে গঙ্গা (ভাগীরথী)-কে পৃথিবীতে আনার সময় ভগিরথকে শিব সহায়তা করেন। এসময় শিবের জটা আকাশময় ছড়িয়ে পড়েছিল। এজন্য শিবকে ‘ব্যোমকেশ’ বলা হয়।

 *গঙ্গোত্রী: হিমালয়ের পাদদেশে গাড়োয়াল প্রদেশের যে স্থানে গঙ্গা অবতীর্ণ হয়, সে স্থানের নাম ‘গঙ্গোত্রী’।

 *পিনাক-পাণির ডমরু-ত্রিশূল: শিব বা মহাদেব ‘পিনাক’ নামক ধনু ধারণ করেন বলে তার নাম ‘পিনাক-পাণি’। তাঁর হাতে থাকে ডমরু নামক ডুগডুগি জাতীয় বাদ্যযন্ত্র ও ত্রিশূল।

 *ধর্মরাজের দণ্ড মৃত্যুর দেবতা যমরাজের অপর নাম ধর্মরাজ। ইনি যে দণ্ডের (যষ্টির) সাহায্যে জীবের প্রাণসংহার করেনতা হলো ধর্মরাজের দণ্ড।

 *বস্ত্র, ঈশান-বিষাণে ওঙ্কার: দধীচি-মুনির অস্থি দ্বারা নির্মিত ইন্দ্রের অস্ত্রের নাম বজ্র। ঈশানপ্রলয়ের দেবতা, শিব। বিষাণপশুর শিং দিয়ে তৈরি বাদ্যযন্ত্র যা ফুঁ দিয়ে বাজান্যে হয়, শিঙা। আর ‘ওঙ্কার’ এর অ-বিষ্ণু, উ- শিব ও ম- ব্রহ্ম। এক কথায় ঈশ্বরবাচক ধ্বনিই হলো ‘ওঙ্কার’।

 *রৌদ্র-রুদ্র-রবি: রোদে তাপিত উগ্র শিবের সংহার মূর্তিসদৃশ সূর্য।

 *হোম-শিখা: দেবতার উদ্দেশ্যে ঘৃতাহুতির যজ্ঞাগ্নির শিষ বা শিখা।

 *সাগ্নিক: নিয়ত বৈদিক নিয়মে যজ্ঞকারী ব্রাহ্মণ।

 *জমদগ্নি: মহর্ষি জমদগ্নি বর্তমান মন্বন্তরের সপ্তর্ষিদের একজন। বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার বলে খ্যাত এবং তেজস্বী পরশুরামের পিতা। তিনিও আগুনের মতো তেজস্বী ছিলেন।

 *ইন্দ্রাণী সূত: ইন্দ্রের স্ত্রীর নাম ইন্দ্রাণী বা শচীদেবী। ইন্দ্রাণী-সুত জয়ন্ত। রামায়ণে ইনি বীরবিক্রমে রাক্ষস সেনাদের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন।

 *চক্র-মহাশঙ্খ: পুরাণোক্ত প্রাচীন অস্ত্রবিশেষ। আর মহাশঙ্খবৃহৎ শঙ্খ। বিষ্ণুর চার হাতে শঙ্খ, চক্র, গদা ও পদ্ম। এখানে বিষ্ণুর হাতের চক্র ও মহাশঙ্খের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

 *ক্ষ্যাপা দুর্বাসা: অত্রিমুনির ঔরসে ও অনসূয়ার গর্ভে জন্ম নেয়া কুৎসিত বেশধারী উগ্র-স্বভাববিশিষ্ট মুনি। শিবের অংশাবতার হিসেবে খ্যাত এই মুনি স্ত্রীর শতত্রুটি মার্জনা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু স্ত্রীর ১০১-তম ত্রুটির জন্য তাকে শাপ দিয়ে পুড়িয়ে ভষ্মীভূত করেছিলেন। এর শাপে ইন্দ্র শ্রীভ্রষ্ট হন, শকুন্তলা দুষ্মন্ত কর্তৃক পরিত্যক্তা হন; লঘু পাপে গুরুদণ্ডনিজের মনমতো না হলেই শাপ-শাপান্ত করে অস্থির হতেন।

 *বিশ্বামিত্র: ব্রহ্মর্ষি বিশ্বামিত্র জন্মসূত্রে ক্ষত্রিয় হয়েও তপস্যা বলে ব্রাহ্মণত্ব লাভ করে ব্রাহ্মণ হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন পরম অধ্যবসায়ী।

 *মহাপ্রলয়ের দ্বাদশ রবির রাহু-গ্রাস: দানব রাহু দেবতা সেজে কৃষ্ণের দেয়া সুধা পান করার সময় চন্দ্র ও সূর্যের কারণে ধরা পড়ে গেলে ক্রুদ্ধ বিষ্ণু সুদর্শন চক্র দ্বারা মাথা কেটে ফেলে। ছিন্ন-মস্তকের নাম রাহু ও ধড়-অংশের নাম কেতু। মস্তক ছিন্ন হলেও স্বর্গসুধা পানের কারণে আগেই সে অমরত্ব লাভ করেছে। রাহু সুযোগ পেলেই চন্দ্র-সূর্যকে গিলে ফেলে চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ ঘটায় বলে পৌরাণিক বিশ্বাস। মহাপ্রলয়ের সময় এরূপ বারোটি সূর্যের রাহু-গ্রাসের সাথে কবি আপন বিদ্রোহীসত্তার শক্তিকে তুলনা করেছেন।

 *প্রভঞ্জনের উল্লাস: ঝড়-ঝাপটায় পবন-দেবতার পরম আনন্দ।

 *বাসুকি: সর্পরাজ বাসুকি (অনন্তদেব) শিবের সর্প, মনসা তার বোন। যে দেবতা-শিবের গলা পেঁচিয়ে থাকে। হিন্দু পুরাণমতে দেবতারা সমুদ্র মন্থনের জন্য বাসুকিকে রজ্জু হিসেবে ব্যবহার করেছিল। বাসুকির ফণা পাঁচটি এবং সেগুলো পদ্মফুলের মতো বিস্তৃত। পুরাণে বাসুকিই নাগদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। বাসুকি কশ্যপ মুনির ঔরসে ও কদ্রুর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

 *শ্যামের হাতের বাঁশরী: কবি এখানে বাংলার দেশজ মিথ তথা লোকপুরাণের ব্যবহার ঘটিয়েছেন। দেশের মৃত্তিকা- মূল খুঁড়ে আহৃত লোকপুরাণের শব্দমালায় নিজেকে প্রকাশ করেছেন“আমি শ্যামের হাতের বাঁশরী”। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হাতের বাঁশি বাজিয়ে যেমন গোপিকাদের মুগ্ধ করতেন, কবিও তেমন।

 *যুগল কন্যা: দেবশ্রেষ্ঠ বিষ্ণুর অপর নাম নারায়ণ। নারায়ণের দু’ স্ত্রীকমলা বা লক্ষ্মী এবং বীণাপাণি বা সরস্বতী। তারা উভয়ে সহোদরা। দেবী দুর্গার সন্তান। ভিন্নমতে, সমুদ্র মন্থনের সময় লক্ষ্মী ও সরস্বতীর উদ্ভব হয়, বিষ্ণু তাদের গ্রহণ করেন।

 *ছিন্নমস্তা চণ্ডী: দেবী ছিন্নমস্তা আত্মবলিদান ও কুণ্ডলিনী শক্তির জাগরণের প্রতীক। অন্যদিকে তিনি একাধারে যৌনশক্তি ও যৌনসংযমের প্রতীক। অপর দৃষ্টিতে, তিনি জগজ্জননীর জীবনদাত্রী ও জীবনহস্তী-এ দু’ পরস্পর বিরোধী সত্তার যুগলমূর্তি। দশমহাবিদ্যার অন্যতমা এ দেবী ছিন্নমস্তা, প্রচণ্ড চণ্ডিকা। এক হাতে নিজের কাটা মুণ্ডু, অপর হাতে কাতরি।

 *জগদীশ্বর-ঈশ্বর আমি পুরুষোত্তম সত্য: কবি নিজেকে ঈশ্বর হিসেবে চির-দুর্জয়, এমনকি পুরুষোত্তম, পরব্রহ্মসত্যে সত্তাবান হয়ে অনন্ত শক্তির অধিকারী বলে প্রকাশ করেছেন।

 *পরশুরামের কঠোর কুঠার: জমদগ্নির ঔরসে ও রেনুকার পঞ্চম গর্ভে পুরণোক্ত ঋষিবিশেষ পরশুরামের জন্ম হয়। বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতারখ্যাত পরশুরাম তাঁর প্রিয় কুঠার দিয়ে একুশবার ক্ষত্রিয়কুল ধ্বংস করেছিলেন বলে কথিত আছে। পিতার আদেশে তিনি কুঠার দিয়ে মাতৃহত্যা করেন। আবার সাধনাবলে মাকে বাঁচিয়ে তোলেন। পরশুরাম পৃথিবীকে নিঃক্ষত্রিয় করতে চেয়েছিলেন।

 *হল বলরাম-স্কন্ধে: বলরাম হলেন শ্রীকৃষ্ণের বড় ভাই। গদাযুদ্ধে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হলেও তার প্রিয় অস্ত্র ছিল হল বা লাঙ্গল। তাই তাঁকে ‘হলধর’ বা ‘হলায়ুধ’ বলা হতো। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে তিনি নিরপেক্ষ থাকলেও কংসবধে শ্রীকৃষ্ণকে সহায়তা করেছেন। দুর্যোধন ও ভীমের গদাযুদ্ধে ভীম অন্যায়ভাবে দুর্যোধনের উরু ভেঙ্গে দিয়েছেন। এতে বলরাম ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়ে পাণ্ডবদের আক্রমণ করতে উদ্যত হন। শ্রীকৃষ্ণ তখন বলরামকে নিবৃত্ত করেন।

*বিদ্রোহী ভৃগু: ভৃগু প্রাচীন সপ্তর্ষিদের অন্যতম। একবার মুনি-ঋষিরা ব্রহ্মা, শিব ও বিষ্ণুর মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ তা মীমাংসা করার জন্য ভৃগুর দ্বারস্থ হন। ভৃগু প্রথমে ব্রহ্মা ও পরে শিবের সাথে দেখা করেন এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাদের ক্ষেপিয়ে তোলেন। সবশেষে তিনি বিষ্ণুর সাথে দেখা করতে গিয়ে দেখেন, বিষ্ণু ঘুমাচ্ছেন। তখন তাকে জাগাতে ভৃগু বিষ্ণুর বুকে লাথি মারেন। ঘুম ভেঙ্গে বিষ্ণু ভৃগুর এই ধৃষ্টতায় রাগান্বিত না হয়ে বিনয় প্রদর্শন করেন। এজন্য ভৃগু বিষ্ণুকে শ্রেষ্ঠ বলে মীমাংসা করেন। সে থেকেই ভগবান শ্রীবিষ্ণু বা গোপালের বিগ্রহে ডানবক্ষে ভূগুমুনির চরণচিহ্ন দেয়া হয়।

 *খোদার আসন আরশ: আল্লাহর আসন বা সিংহাসন।

 *ইস্রাফিলের শিঙ্গার মহা-হুঙ্কার: একজন ফেরেশতা যিনি কিয়ামত বা মহাপ্রলয়ের সংকেত দান করেন। ইসলাম ধর্মমতে, চারজন প্রধান ফেরেশতার অন্যতম হলেন ইস্রাফিল। তিনি শিঙ্গার মহা-হুঙ্কারে মহাপ্রলয় ঘোষণা করবেন।

*বোররাক: কুরআন-বর্ণিত দিব্যযান। কোথাও কোথাও একে অশ্ব হিসেবেও কল্পনা করা হয়েছে, যার দেহ অশ্বের, কিন্তু মুখমণ্ডল মানুষের। অত্যন্ত কমনীয়, প্রায় নারীর মতো। উপরন্তু বোররাকের মাথায় মুকুট।

 *জিব্রাইল: আল্লাহর যে দূত তাঁর বাণী নবীদের নিকট পৌঁছে দেন।

 *হাবিয়া দোজখ: ইসলাম ধর্মমতে এটা এমন একটা আগুনের গর্ত, যার কোন তলা নেই, যেখানে পতিত হলেপড়তেই থাকবে, পড়তেই থাকবে, যার কোন শেষ নেই।

 *জাহান্নাম: ধর্মীয় বিশ্বাসমতে, মৃত্যুর পর পাপীদের শান্তিভোগের জন্য নির্দিষ্ট স্থাননরক, দোজখ।

 *বেদুঈন: আরব মরু-অঞ্চলে ঘুরে বেড়ায় এমন যাযাবর জাতিবিশেষ। এরা সাহসী ও যোদ্ধা হিসেবে খ্যাত। মরুভূমির বালু উড়িয়ে উদ্যম ছুটে চলা এদের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।

 *চেঙ্গিস: চেঙ্গিস খান মঙ্গোলীয়। প্রধান মঙ্গোল রাজনৈতিক ও সামরিক নেতা বা মহান খান, ইতিহাসেও তিনি অন্যতম বিখ্যাত সেনাধ্যক্ষ ও সেনাপতি। জন্মসূত্রে তাঁর নাম ছিল তেমুজিন (থেমুচিং)। তিনি মঙ্গোল গুষ্ঠীগুলোকে একত্রিত করে মঙ্গোল সাম্রাজ্যের (১২০৬-১৩৬৮) গোড়াপত্তন করেন। ইহা এক সময় পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্য ছিল। তিনি মঙ্গোলিয়ার বোরজিগিন বংশে জন্মগ্রহণ করেন। বিশ্বের কিছু অঞ্চলের জন্য চেঙ্গিস খান অতি নির্মম ও রক্তপিপাসু বিজেতা হিসেবে চিহ্নিত। চেঙ্গিস খান ছিলেন দুনিয়ার সর্বকালের সবচেয়ে নৃশংস শাসক।

 *অর্ফিয়াসের বাঁশরী: দেবতা ছিলেন অর্ফিয়াস। প্রাচীন জিউস-নির্ভর গ্রিসের গানের দেবতা অ্যাপেলো ও মিউজ ক্যাল্লোপির পুত্র। অর্ফিয়াস ছিলেন মহান কবি ও শিল্পী। তাঁর গানে দেবতা, মানুষ, এমনকি পশু-পাখিরাও মুগ্ধ হয়ে যেতো। সুন্দরী নিম্ফ-কন্যা ইউরিডিসির রূপে মুগ্ধ হয়ে অর্ফিয়াস প্রেম নিবেদন ও মন জয় করার জন্য মনভুলানো সুরে গান গাইলেন। শেষ পর্যন্ত ইউরিডিসি ভালোবাসে অর্ফিয়াসকে এবং বিয়ে করে। সাপের কামড়ে অকালে মৃত্যু হয় ইউরিডিসির। অর্ফিয়াস পাগলের মত হয়ে গেল। শোকে ধুকেধুকে একদিন অর্ফিয়াস মারা গেল। মেজবান দ্বীপে বর্তমানে অর্ফিয়াস মন্দিরে ইউরোপের নানান মানুষ প্রার্থনা করতে আসে।

 ‘বিদ্রোহী’ কবিতার জন্মশতবার্ষিকীতে এসেও দেখা যাচ্ছে, দেশের (তৎকালীন ভারতবর্ষের) ভূ-খণ্ডের নানাবিধ পরিবর্তন সাধিত হয়েছে; কিন্তু শতবর্ষ পূর্বের সেই সামাজিক বৈষম্য, অন্যায়, অবিচার, বঞ্চনা, শোষণ থেকে গণমানুষের মুক্তি আসেনি। ফলে শতবর্ষ পরেও বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিত সমাজব্যবস্থা ভেঙে-চুরে নতুন এক সাম্যের সমাজ গড়তে সমাজবিপ্লবের জন্য কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা ও তাঁর বিদ্রোহী সত্তা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। কৃষক-শ্রমিক-মেহনতী তথা গণমানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি, শোষণহীন শান্তি-সাম্যের এক নতুন সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সমাজবিপ্লবে গণসচেতনতা সৃষ্টিতে নজরুল পাঠে, নজরুল চর্চায় প্রগতিশীল, মুক্তচিন্তক ও সাম্যমনা ব্যক্তিদের এগিয়ে আসা বর্তমান সময়ের ঐকান্তিক প্রত্যাশা।

 তথ্যসূত্র:

১) কাজী নজরুল ইসলামের ‘অগ্নিবীণা’, ‘সঞ্চিতা’।

২) মহাভারত, রামায়ণ, বাংলাপিডিয়া, উইকিপিডিয়া।

৩) ‘পদচিহ্ন সাহিত্য পত্রিকা’য় প্রকাশিত বিষ্ণুপদ চৌধুরীর প্রবন্ধ।

৪) ‘বিদ্রোহী কবিতার আঁতুড়ঘর’ -সুব্রত আচার্য, দ্য ডেইলি স্টার।

৫) কেমন ছিল নজরুল রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক? আসাদ জামান, sarabangla.net/

৬) নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় মাইথোলজির প্রয়োগ -প্রবীর চ্যাটার্জী, ভোরের পাখি।

৭) বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান

৮) banglanews24.com

৯) bangala wave

১০) BBC News/বাংলা

১১) www.prathomalo.com

১২) KAZI NAZRUL ISLAM -the voice of poetry......wholeness. -Winston E. Langley.

১৩) KAZI NAZRUL ISLAM-selected works. Translated from Bengali by Sajed Kamal.

১৪) samakal.com

 লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক, লোকজ গবেষক ও প্রধান সম্পাদক, কীর্তিনাশার কাব্য।

ই-মেইল: ssdebnath1955@gmail.com

إرسال تعليق (0)
أحدث أقدم